ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমান যুগে ডিজিটাল প্রযুক্তি সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানেনা এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। তারপরও আজকে আমি ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের এই আর্টিকেলটিতে।

ডিজিটাল-প্রযুক্তির-সুবিধা-ও-অসুবিধা
চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক, ডিজিটাল প্রযুক্তি কি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কি কি রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী সম্পর্কে। আজকের এই আর্টিকেলটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এর মাধ্যমে আপনারা সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা

ডিজিটাল প্রযুক্তির ইতিহাস বা পরিচিতি

ডিজিটাল প্রযুক্তির ও ইতিহাস বা উৎপত্তি সম্পর্কে অনেকেরই জানা আবার অনেকেরই অজানা রয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা দুটি রয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি মানব জীবনের এক ইতিহাসের দ্বার উন্মোচন করেছে। বর্তমান বিশ্বের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং আমাদের কাজকে সহজ করতে প্রযুক্তি অপরিহার্য। প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মাঝে নানা প্রযুক্তির আবিষ্কার শুরু হয়েছিল। বর্তমানকালে সেই প্রযুক্তির আবিষ্কারে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে ডিজিটাল টেকনোলজি।

গণিতবিদ বেল ল্যাবস তার অগ্রণী ১৯৪৮ প্রবন্ধে যোগাযোগের গাণিতিক তত্ত্বে ডিজিটালাইজেশন এর ভিত্তি স্থাপন করার জন্য কৃতিত্ব লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে ডিজিটাল বিপ্লব প্রযুক্তিকে এনালগ ফরম্যাট থেকে ডিজিটাল ফরম্যাট এ রূপান্তরিত করা হয়েছে। ১৯৮০ এর দশকে ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হওয়ার পর মেকানিক্যাল ডিভাইস এবং এনালগ ইলেকট্রনিক থেকে পরিবর্তিত হয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অগ্রসর হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রসার লাভ করেছে এবং বাংলাদেশেও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০২১ সালে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল তার মূল শিরোনাম। এরপর ডিজিটাল বিপ্লবের ঘোষনা আসে ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে। তারপর থেকেই বাংলাদেশ প্রতি মুহূর্তে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রসর হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ

ডিজিটাল প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্র সমূহ

ডিজিটাল প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্র সমূহ রয়েছে। আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকা প্রয়োজন। এর ফলে আমাদের কাজকে আমরা স্বল্প সময় এবং সহজে শেষ করতে পারবো। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ইন্টারনেট

বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট একটি প্রয়োজনীয় মাধ্যম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করতে পারি এবং তাও আবার অনেক কম সময়ের মধ্যে। ইন্টারনেট নেটওয়ারক ইন সিস্টেম সারা বিশ্বের মানুষকে একসাথে সংযুক্ত করেছে ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্র সমূহ ব্যবহার করতে বেশিরভাগ ইন্টারনেটেরই দরকার হয়।

ইন্টারনেট আমাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি এবং আমরা সহজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো ব্যবহার করতে পারি ইমেইল পাঠাতে পারি ঘরে বসে অনলাইন শপিং ব্যাংকিং লেনদেনগুলো করতে পারি। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ইন্টারনেটের বিকল্প নেই।

কম্পিউটার

কম্পিউটার আমাদের পেশাগত ও শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার বা টুল ব্যবহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করা হয়। এছাড়াও ডিজাইন ও প্রোগ্রামিং সহ বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করতে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেশিরভাগ কাজগুলোই কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়।

মোবাইল ফোন

মোবাইল ফোন দিয়ে শুরুতে কেবলমাত্র ফোন কল বা টেক্সট করা যেতো। বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোনকে আমরা ব্যক্তিগত সহকারীও বলতে পারি। মোবাইল ফোনের আবিষ্কারের পর থেকেই এটি দিয়ে কম্পিউটারের মতো সব ধরনের কাজ করা সম্ভব হয়। মোবাইল ফোন এপ্লিকেশন বা অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল যুগের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সার্ভিস প্রদান করে থাকে। যেমন ই-কমার্স, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা গ্রহণের মত গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস ইত্যাদি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

সামাজিক যোগাযোগ গুলোর মাধ্যমে আমরা এক মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে থাকা মানুষদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি এবং তাদের সাথে নিজেদের মতামত আদান-প্রদান করতে পারি। বর্তমান সময়ে সামাজিক ও যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অনলাইন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অন্যতম ও জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম  হয়ে উঠেছে। পণ্য সেবা ও বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো বেছে নিয়েছে।

ইনফরমেশন টেকনোলজি

ইনফরমেশন টেকনোলজির মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম গুলোতে যোগাযোগ ও তথ্য সরবরাহ অত্যন্ত সহজ হয়। এটি বিশ্বব্যাপী তথ্য আদান-প্রদান সরবরাহে দ্রুত কাজ সম্পাদন নিশ্চিত করে। নেটওয়ার্কিং, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা অপরিসীম। বাংলাদেশে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং ও ই-কমার্স ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, কলকারখানায় অটোমেশন সহ সকল প্রযুক্তি বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ফ্রিল্যান্সিং ও ই-কমার্স  ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বর্তমান সমাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও প্রত্যেকের মাঝে দূরত্ব কমিয়ে এনেছে। ফেসবুক ও ইন্টারনেট এর মাধ্যমে আমরা মুহুর্তের মধ্যেই যে কোনো ধরনের খবর আপডেট জানতে পারি।এছাড়াও বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে আমরা ভিডিও অডিও কল সহ অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারি।

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে সহজেই ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ও সেবা বাজারজাত করতে পারছেন। ই-কমার্স ওয়েবসাইট যেমন-  দারাজ, চালডাল, বেশিকমার্স ইত্যাদির মাধ্যমে অনলাইন পণ্য বিক্রি হচ্ছে এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে যেমন রকেট বিকাশ নগদ ইত্যাদি ব্যবহার করে লেনদেন আরো সহজ করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ 

ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধি ও ব্যবহার

ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধি ও ব্যবহার এর প্রয়োজনীয়তা অপারিসীম। ডিজিটালাইজেশন এর যুগের ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি অবদানে অনেক নতুন ব্যবসায়ীর আবির্ভাব হয়েছে। ডিজিটাল দক্ষতা প্রসার হলে বাংলাদেশে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হবে। আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এর অন্যতম উদাহরণ।

অনলাইন মার্কেটপ্লেসে এখন সহজেই কাজ করা যায়। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ও সেবার প্রচার সহজেই করতে পারেন আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং এর দক্ষতা থাকলে। ডিজিটাল দক্ষতার দরকার রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি সেবাগুলো গ্রহণ করার ক্ষেত্রে। ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ডিজিটাল এর ব্যবহার বিভিন্ন টুল গুলোর ব্যবহার শিখতে হয়। যেমন- মাইক্রোসফট অফিস, গুগল ডক্স এবং গুগলএলালিটিক্স এর মত টুলগুলো ব্যবসায়ীদের কাজে ব্যবহৃত হয়।

সেলস ও মার্কেটিং এর দক্ষতা থাকলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ব্যবসার প্রচার করা সহজ হয়। ডিজিটাল টুল ও প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের দক্ষতা অর্জনের জন্য কার্যকর টিপসগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

  • সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা যায়
  • নতুন ডিজিটাল টুলগুলো শেখার জন্য আপনাকে ধৈর্যের সাথে নিয়মিত কাজ এবং অনুশীলন করতে হবে।
  • নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ব্যক্তিদের সাথে সংযুক্ত হয়ে তাদের থেকে পরামর্শ নিয়ে ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়।
  • Stack Overflow ও Reddit এর মতো সকল ফোরামে যোগ দিয়ে যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য সহায়তা নেওয়া যায়।
  • প্রযুক্তি গুলোর আপডেট সম্পর্কে জানা এবং নতুন ফিচারগুলো শিখলে সমাজে দক্ষ হয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার

চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। ডিজিটাল প্রযুক্তি বর্তমান চিকিৎসা ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা কয়েক বছর আগে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনোরকম উন্নতি ছিল না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসার ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এতো উন্নতি ঘটেছে যা ব্যবহারে মানুষ অনেক উপকার পাচ্ছে।
চিকিৎসা-ক্ষেত্রে-ডিজিটাল-প্রযুক্তির-ব্যবহার
বর্তমানে খাদ্য ভেজালের কারণে এবং পরিবেশগত কারণে বেশিরভাগ মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেসব জটিল রোগ খুব সহজেই খুঁজে বের করে তার সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে। যদি আপনি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি গুলো কি কি রয়েছে।

দ্রুত রোগ নির্ণয় ও নিরাময় করতে

পূর্বে অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসা ক্ষেত্রে এতটা নির্ভরশীল ছিলো না, যা বর্তমানের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মানুষ। এর কারণ হচ্ছে পূর্বে চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোনো রকম উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ছিলোনা। তবে দিন দিন বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের উন্নত ও ডিজিটাল প্রযুক্তি আবিষ্কার করে চলেছে। এই উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার ফলে অত্যন্ত দ্রুত রোগ নির্ণয় ও নিরাময় করা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে অনেক রোগী ফিরে পাচ্ছে তাদের মূল্যবান জীবন।

রোগীদের রেকর্ড সংগ্রহের জন্য তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার

ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে রোগীদের রেকর্ড খুব সহজে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। রোগীদের বিভিন্ন ধরনের রোগের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা এবং সেই অনুযায়ী রোগীদের ওষুধ সেবন করা অনেকটা সহজ হয়। ডাক্তারদের চিকিৎসা দান সহজ করার জন্য তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে এ তথ্য-প্রযুক্তির সময়ে রোগীদের তথ্য সহজেই বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে রেকর্ড করে রাখা হয় এবং তা সারা জীবনের জন্য থেকে যায়। 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে আপনি যদি সঠিকভাবে অনুসরণ করে থাকেন তাহলে আপনি এ বিষয়গুলোর সঠিক ধারণা পেয়ে গেছেন।

শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার

শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার বর্তমান সময়ে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োজন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম গুলোর সাহায্যে।শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক বোর্ড এসেছে শ্রেণীকক্ষে যা কম্পিউটারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছে।

এছাড়াও মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক এবং ভার্সিটি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং কম্পিউটার লাইভ এর মাধ্যমে শিক্ষামূলক ভিডিও দেখে খুব সহজে শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।বিশেষ করে করোনা কালীন সময়ে এই ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছে। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার ক্ষেত্রে পথকে অনেকটা প্রশস্ত করেছে।

ডিজিটাল তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিষয় সম্পর্কে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে। ডিজিটাল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তাদের বিশাল তথ্য ভান্ডারের এক্সেস প্রদান করে থাকে সকলকে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন এডুকেশনাল ওয়েবসাইট এবং ই-লার্নিং অ্যাপ এর মাধ্যমে পড়াশোনার জগতকে করেছে আরো বাস্তবসম্মত এবং জ্ঞান অর্জনের শ্রেষ্ঠ জায়গা হিসেবে।

আরো পড়ুনঃ 

কর্মক্ষেত্রে বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার

কর্মক্ষেত্রে বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বা কর্ম ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে। টেক্সটের মাধ্যমে, ভিডিও কলের মাধ্যমে এবং অডিও কলের মাধ্যমে মানুষের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয় এই ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করে। কর্মক্ষেত্রে বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে একে অপরের সাথে কাজ সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় করা এবং যোগাযোগ রাখা অনেক সহজ।
কর্মক্ষেত্রে-বা-ব্যবসায়িক-ক্ষেত্রে-ডিজিটাল-প্রযুক্তির-ব্যবহার
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ছাড়াও কর্মীদের মূল্যায়ন এবং নতুন কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া উন্নতির মাধ্যমে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজকে উন্নত করতে সহায়তা করেছেন। এতে করে অনেকটা সময় অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির অনেক ব্যবহার রয়েছে তাই চলুন সেগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক।
  • বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, বিভিন্ন ব্যাংকিং সেক্টর, বীমা কোম্পানি এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আইসিটির ব্যাপক ব্যবহার এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার মাধ্যমে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছে তাই নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে কর্মসংস্থান হিসেবে এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
  • বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র গুলোতে আইসিটি ব্যবহার করে তাদের কর্মচারীদের দক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছে।
  • আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে একত্রিত হতে হয়। এতে করে প্রতিষ্ঠানের অনেক অর্থ ব্যয় হতো যা বর্তমান সময়ে টেলিযোগাযোগ, অডিও ভিজুয়াল, জুম মিটিং ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ বর্তমান সময়ে অনেকটাই কমে এসেছে। ফলে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রফিটও অধিকাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমান সময়ের প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার উদ্দেশ্যে মেশিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর প্রযুক্তির সাথে জড়িয়ে রয়েছে এই মেশিনের ব্যবহার। প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা হতো হাতে কলমে। যা করতে অধিক সময় পরিশ্রম অর্থব্যয় ইত্যাদি অপচয় হতো। তারপরও কাজ সম্পূর্ণভাবে নির্ভুল করা সম্ভব হতো না। কর্মক্ষেত্রে বা ব্যবসায় ক্ষেত্রে এ সকল জটিলতা দূর করতে প্রযুক্তির অবদান সবচেয়ে বেশি রয়েছে।

ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার বা অসুবিধা

ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই অধিকাংশ রয়েছে। যা একটির থেকে অন্যটি পিছিয়ে নেই। সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আপনার নিজের কাছে আপনি কোন কোন দিক অবলম্বন করে চলতে চান। ডিজিটাল প্রযুক্তি বর্তমান সময়ে আমাদের জীবন যাত্রার মান অনেক উন্নত ও সহজ করলেও এর কিছুটা সিস্টেম আমাদের অসুবিধা সৃষ্টির কারণ এবং তা জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের সুবিধার দিক জানলেও অসুবিধার দিক খুব কমই আমাদের জানা।

ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা গুলোর মধ্যে নিরাপত্তা অন্যতম। নিরাপত্তা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিরাপত্তা বলতে আমি এখানে যেকোনো ডাটার নিরাপত্তা সম্পর্কে বুঝাতে চাচ্ছি। যেহেতু বিশ্ব ডিজিটাল যুগের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সেহেতু আমাদের বিভিন্ন ডাটা কম সময়ে ছড়িয়ে পড়াটাও সহজ হয়ে পড়েছে। যার ফলে কারোর কোনো ডাটায় নিরাপদ নয়। এতে করে মানুষ অনেকটা আতঙ্কিত।

ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধার মধ্যে ম্যানিপুলেশন গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধা। ডিজিটাল মিডিয়া মানিপুলেশন মানে কোনো সত্য ঘটনাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবর্তন করাকে বোঝায়। তাই ডিজিটাল প্রযুক্তির এই গুরুত্বপূর্ণ ফিচারের মাধ্যমে বর্তমানে ফেইক জিনিসপত্র ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে। এতে করে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। এছাড়াও ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের কাজের চাপ কমিয়ে দিলেও একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখবেন প্রযুক্তির কারণে আমাদের কাজের চাপ, মানসিক ও শারীরিক চাপ সবকিছু বেড়েই চলেছে।

উন্নতির সাথে সাথে চাকরির বাজারও আস্তে আস্তে ছোট হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সকল কাজকর্মের জন্য অটোমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হচ্ছে এতে ভবিষ্যতে পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ কাজ শূন্য হয়ে পড়বে। শুধুমাত্র যে এসব অসুবিধাই রয়েছে তা কিন্তু নয়। বর্তমান সময় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে আরো অনেক অসুবিধা রয়েছে। তবে আমরা এই প্রযুক্তিকে কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে ভালোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবো।

ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে জড়িত চ্যালেঞ্জ এবং তার সমাধান

ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে জড়িত চ্যালেঞ্জ এবং তারা সমাধান জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে নারী-পুরুষের বৈষম্যতা দূর করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষ এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠী মানুষদের মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। তবে বর্তমান সময়ে এই বিভাজন দূর করতে গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ ও ডিজিটাল সেবা সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। 

বাংলাদেশে তথা পুরো পৃথিবীতে ডিজিটালাইজেশনের অগ্রগতির সাথে সাথে সাইবার অপরাধ বেড়েই চলেছে। অনলাইন জালিয়াতি, তথ্য চুরির মত সমস্যা, প্রতারণা ইত্যাদি আমরা প্রায়ই দেখতে পাচ্ছি। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও সরকারকে সাইবার অপরাধ দমন এবং আইনি পদক্ষেপের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, সাইবার বুলিং ও অনলাইন হয়রানি ইত্যাদির মতো সমস্যা ডিজিটাল প্রযুক্তি অপব্যবহারের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। নতুন ইউজারদের সাইবার বুলিং এর অপব্যবহারের কুফল সম্পর্কে শিক্ষা দিতে এবং সচেতন করতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীকে প্রথমেই এর সুফল ও কুফল দুটো সম্পর্কেই অবগত রাখতে হবে।

আরো পড়ুনঃ 

শেষ কথা

আজকের এই আর্টিকেলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ও সঠিক তথ্য জানানো চেষ্টা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেল পড়ে আপনারা অনেকটাই উপকৃত হয়েছেন। এ আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন। এছাড়াও আপনাদের কোনো বিষয়ে মতামত কিংবা জিজ্ঞাসা থেকে থাকলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।

সামগ্রিকভাবে বলা চলে ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে দিন দিন উন্নতির দিকে অগ্রসর করছে ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের উৎপাদনশীলতা জীবনযাত্রার মান যোগাযোগ এবং নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করছে। বর্তমান সময়ে সামান্য অংকের হিসাব করতে খাতা কলমের এখন আর প্রয়োজন পড়ে না, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে তা খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব হয়। 

ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেহেতু ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের পরিধি বিশাল। যোগাযোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান বের করা সম্ভব হচ্ছে। তাই এ ডিভাইস গুলোর ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা উচিত। তবে আপনাদের সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, যে ডিজিটাল প্রযুক্তি গুলো অবশ্যই ভালোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন। যাতে করে আমরা সবাই সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে পারি। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রকমসকম ডট কম ওয়েবসাইট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url