ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন
গাছের গুনাগুন জানতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ আপনার জন্য। বাংলায় ঘৃতকুমারী আর ইংরেজিতে অ্যালোভেরা নামে পরিচিত এই উদ্ভিদের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যার ব্যবহার বহুগুণ আগে থেকেই।
ভেষজ উদ্ভিদ অ্যালোভেরার অনেক উপকারিতা রয়েছে। চুল ও ত্বকের পরিচর্যার ক্ষেত্রেও উপকারী এ উদ্ভিদ। চলুন জেনে নিই ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার কি কি পুষ্টিগুণ উপকারিতা রয়েছে এবং এর অপকারিতা আছে কিনা সেটাও আমরা জেনে নেবো।
পেজ সূচিপত্রঃ ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন বা উপকারিতা
- ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের বৈশিষ্ট্য
- ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের পুষ্টিগুন
- পাকস্থলীতে সংক্রমণ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘৃতকুমারী গাছের ভূমিকা
- স্বাস্থ্যকর মাড়ি এবং দাঁতের জন্য ঘৃতকুমারী গাছের গুরুত্ব
- ডায়াবেটিসের জন্য ঘৃতকুমারী গাছের উপকারিতা
- চুল ও ত্বকের যত্নে ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন
- রাতে ঘৃতকুমারী গাছের ব্যবহারের উপকারিতা
- পুরুষদের জন্য ঘৃতকুমারী গাছের উপকারিতা
- অ্যান্টি-টিউমার এজেন্ট হিসেবে ঘৃতকুমারীর ব্যবহার
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঘৃতকুমারী গাছের উপকারিতা
- কোলেস্টরেল কমাতে ঘৃতকুমারী গাছের ব্যবহার
- ঘৃতকুমারী গাছের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা
- শেষকথাঃ ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের ঔষধি গুনাগুন
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের বৈশিষ্ট্য
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেই। এটি দেখতে কেমন এর নামের উৎপত্তি কোথা থেকে এবং কিভাবে হয়েছে। আপনি কি জানেন, ঘৃতকুমারী নামটি এসেছে আরবীয় শব্দ অলোহে থেকে যার অর্থ তিক্ত পদার্থের ঔজ্জ্বল্য এবং ভেড়া একটি লাতিন শব্দ যার অর্থ সত্য বা খাঁটি।
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালো বার্বাডেনসিস মিলার। সাধারণ নাম অ্যালো ভারা, বার্ন প্লান্ট, ঘি কুমারী, কুমারী এবং এর সংস্কৃত নাম ঘৃতকুমারী। অ্যালোভেরা আদিতে আফ্রিকায় উৎপন্ন হতো। পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আদি উৎপত্তিস্থল ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারত সহ বিশ্বের অধিকাংশ উষ্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রাজস্থান, অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটে এর দেখা মেলে।
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা একটি রসালো প্রজাতি গাছ। এটি এলো পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ঘৃতকুমারী গাছ অনেকটাই কাঁটাযুক্ত ফণীমনসা বা ক্যাকটাসের মতো দেখতে। ক্যাকটাসের মতো দেখতে হলেও এলোভেরা গাছ কিন্তু ক্যাকটাস নয়। এটি লিলি প্রজাতির গাছ। এর আদি নিবাস আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলে ও মাদাগাস্কারে। সাধারণত শিকড় থেকে গজানোর ডাল বা শাখা এর সাহায্যে এ গাছের বংশবৃদ্ধি হয়।
আরোও পড়ুনঃ
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের পুষ্টিগুন
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের পুষ্টিগুন ঘৃতকুমারীর পাতা ও শাঁস ব্যবহার করা হয়। এর পাতার রস যকৃতের জন্য উপকারী। ঘৃতকুমারীর পাতার শাঁস বেটে ফোঁড়ায় লাগালে যন্ত্রণা কমে যায়। পোরাস্থানে ঘৃতকুমারীর রস লাগালে উপকার মেলে। ঘৃতকুমারী হাঁপানি এবং এলার্জি প্রতিরোধে বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকরী। এটি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন অপরিসীম। অ্যাজমা, ড্যানড্রাফ, সেরিয়াসিসের মতো রোগগুলোর জন্য স্কিন কেয়ার চিকিতসাগুলোতে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা খুবই জনপ্রিয়। ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের পাতায় রয়েছে ২০ রকমের খনিজ পদার্থ যা মানবদেহের জন্য যে ২২টি এমিনো অ্যাসিড প্রয়োজন সেগুলো এতে বিদ্যমান।
সেই সাথে অ্যালোভেরাতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৬,বি১২, ভিটামিন সি ও ই। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। দেহের দুর্বলতা দূর করতে অ্যালোভেরার জুসের গুন অনেক। আপনি যদি অ্যালোভেরার জুস পান করেন নিয়মিত তাহলে শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হবে এবং শরীরকে সতেজ ও সুন্দর রাখে।
পাকস্থলীতে সংক্রমণ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে ঘৃতকুমারী গাছের ভূমিকা
পাকস্থলীতে সংক্রমণ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন সম্পর্কে চলুন জেনে নিই।আপনার কি ঘনঘন পেটের সমস্যা হয়? আপনার কি বুক জ্বালার অনুভূতিও হয়? এগুলি কোনো সংক্রমণের উপসর্গ হতে পারে যা পেট ফাঁপা বা গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স রোগ এর কারণ হতে পারে।
একটি সাম্প্রতি সমীক্ষা করে দেখা হয়েছিল ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজের বা আই বি এস চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঘৃতকুমারী কতটা কার্যকরী। সমীক্ষার ফলে দেখা যায় পেট ফাঁপা বা ফোলার মত রোগের উপশমে এলোভেরার প্রয়োগ খুব সাহায্য করে। অতিরিক্ত ভাবে এটাও বলা হয়ে থাকে কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা খেলে কাজ হয় কারণ ঘৃতকুমারী একটি উৎকৃষ্ট জেলাপ।
তবে অ্যালোভেরার রস অথবা ল্যক্টেক্স খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিবেন। কারণ দেখা গিয়েছে প্রয়োজনীয় এলোভেরার জুসের চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে রোগী
স্বাস্থ্যকর মাড়ি এবং দাঁতের জন্য ঘৃতকুমারী গাছের গুরুত্ব
স্বাস্থ্যকর মাড়ি এবং দাঁতের জন্য ঘৃতকুমারী গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা প্রত্যেকেই চাই আমাদের স্বাস্থ্যকর মাড়ি এবং দাঁত থাকুক। কারণ উজ্জ্বল, স্বাস্থ্যকর ত্বকের মত মুখের স্বাস্থ্যও একইরকম গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী রোগ বেড়ে যাওয়ায় মুখের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য একটি প্রাকৃতিক বিকল্প প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
আয়ুর্বেদের সাম্প্রতিক উন্নতির পর জানা যাচ্ছে, দাঁতের প্লাক এবং জিনজিভাইটিস রোধে ঘৃতকুমারী জেল খুব কার্যকরী এবং তার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। মুখের সমস্যার জন্য যে ব্যাকটেরিয়াগুলি দায়ী সেগুলিকে এটি ধ্বংস করে। এছাড়াও দেখা গিয়েছে, এলোভেরা জেল এর ব্যবহার মুখের আলসার কার্যকরী এবং দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে।
এছাড়াও অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর জুস দাঁত ও মাড়ির ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। দাঁতে কোনো ইনফেকশন থাকলে তাও দূর করে দেয় ঘৃতকুমারী। ঘৃতকুমারীর জুস নিয়মিত খাওয়ার ফলে দাঁত ক্ষয়রোধ করা সম্ভব হয়। এছাড়াও আমাদের অনেক সময় অনেকেরই মুখে ঘা হয় এবং এই মুখের ঘা দূর করতে এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই ঘায়ের জায়গায় এলোভেরার জেল লাগিয়ে রাখলে মুখের ঘা ভালো হয়ে যায়।
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীতে আছে ভিটামিন সি। যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালোভেরার জেল মাউথ ওয়াশ এর পরিবর্তেও ব্যবহার করা যায়।
ডায়াবেটিসের জন্য ঘৃতকুমারী গাছের উপকারিতা
ডায়াবেটিসের জন্য ঘৃতকুমারী গাছের উপকারিতা অনেক গুন। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর জুস রক্তের সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে। ডায়াবেটিস হলে তার শুরুর দিকে নিয়মিত ঘৃতকুমারীর জুস খেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। সুতরাং খাবার খাওয়ার আগে বা খাবার খাওয়ার পরে নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস পান করুন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা জেল হাইপোগ্লাইসেমিক এজেন্ট বা রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় হিসেবে কাজ করে কিনা তা দেখবার জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিভিন্ন সমীক্ষা চালানো হয়েছে এবং অধিকাংশ সমীক্ষায় ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। ভেষজ হিসেবে এটি নিরাপদ কিনা বা এর কত ডোজ হওয়া উচিত সে ব্যাপারে অন্তিম পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর অনেক গুনাগুন এর মধ্যে আরেকটি হলো রক্তচাপ কমাতে এর কোনো জুড়ি নেই। অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর ঔষধি গুণ রক্তচাপ কমায় এবং রক্তে কোলেস্টেরল ও চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে অত্যন্ত কার্যকরী।
আরোও পড়ুনঃ
চুল ও ত্বকের যত্নে ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন
চুল ও ত্বকের যত্নে ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি। অ্যালোভেরার অ্যান্টি-ইনফ্লামেনটরি উপাদান ত্বকের ইনফেকশন দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। ত্বকের র্যাশ, চুলকানি, রোদে পোড়া দাগ দূর করে অ্যালোভেরা জেল। এই জেল ত্বকে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকে এবং বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
ত্বকের অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে ফুসকুড়ি, জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ঘৃতকুমারী আপনার করোটি আর্দ্র রাখে এবং পুষ্টি জোগায়। এটি আপনার চুল বিন্যস্ত রাখে এবং মাথার ত্বকের পিএইচ মাত্রায় সমতা রাখে। সব কিছু মিলিয়ে এই সব গুনের কারণে আপনার মাথার চুলের বৃদ্ধি হয় এবং চুল পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরাতে রয়েছে হাজারও ঔষুধি গুন। এটি শুধু ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে না। এটা চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। এটা চুল সিল্কি এবং ঝলমলে করতে সাহায্য করে। তাছাড়াও ঘৃতকুমারী চুলের গোড়ায় থাকা খুশকি দূর করে এবং এটি চুলের গোড়াকে মজবুত করতে সাহায্য করে।
একটি পাত্রে ৩ চামুচ ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা জেল, ২ চামুচ মধু এবং হাফ কাপ টক দই নিয়ে এক সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন চুল অনেক ঝলমলে এবং মসৃণ হবে। এছাড়াও একটি পাত্রে ৪ চামুচ অ্যালোভেরা জেল, ৪ চামুচ পেঁয়াজের রস একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ফুলের গোড়ায় গোড়ায় ব্যবহার করুন এবং ৩০ মিনিট পর চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
রাতে ঘৃতকুমারী গাছের ব্যবহারের উপকারিতা
রাতে ঘৃতকুমারী গাছের ব্যবহারের উপকারিতা অনেক রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক। রাতে এলোভেরা ব্যবহার ও আপনাদের ত্বককে ভালো রাখতে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে অ্যালোভেরার ফেসিয়াল ব্যবহার করে ঘুমাতে যান। এতে আপনাদের তবে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে এবং চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল অথবা কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনি বাড়িতে বসেই রাতে শোবার আগে অ্যালোভেরা দিয়ে ফেসিয়াল প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করুন। অ্যালোভেরা আপনাদের ত্বকের নানা রকম সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। যারা ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা ব্যবহার করেননি তারা অবশ্যই অ্যালোভেরা ব্যবহার করে দেখবেন যে অ্যালোভেরা আপনাদের ত্বকে জাদুর মত কাজ করছে।
রাতে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম হচ্ছে ত্বকে ব্যবহারের জন্য গাছের টাটকা পাতা বেশি উপকারী আর যদি না থাকে তাহলে কেনা অ্যালোভেরা জেলও নিতে পারেন। অ্যালোভেরা হলো ত্বকের যত্নে অনেক ভালো একটি প্রাকৃতিক উপাদান। রাতে আপনি এই অ্যালোভেরার ফেসিয়াল প্যাকটি ব্যবহার করলে আপনাদের ত্বকের কালো দাগ, রোদে পোড়া, দাগ বয়সের ছাপ দূর করতে ভীষণ ভাবে কার্যকরী।
পুরুষদের জন্য ঘৃতকুমারী গাছের উপকারিতা
পুরুষদের জন্য ঘৃতকুমারী গাছের উপকারিতা অনেকেই জানেন আবার জানেন না। যদি শরীরকে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখতে চান তাহলে অবশ্যই এলোভেরা জুস খাওয়া শুরু করুন। এই অ্যালোভেরা খাওয়ার ফলে আপনাদের শরীরে বয়সের ছাপ পড়বে না আর যৌবন ধরে রাখতেও সাহায্য করবে। এখন পুরুষদের ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক শক্তি কমে আসে একই রকম ভাবে কমে যৌন শক্তি। যৌন ইচ্ছা কমতে থাকে ব্যাপক হারে। অনেকে আবার যৌন মিলনে অক্ষম হয়ে পড়েন। ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা জুসে শরীরে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি পায়। পুরুষদের শরীরে এই হরমোন বৃদ্ধির ফলে বজায় থাকে যৌন ইচ্ছে এবং বাড়তে থাকে কামশক্তিও।
যদি আপনাদের শরীরে টক্সিন এর মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে তাহলে আস্তে আস্তে আপনাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অচল ও প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। আর এলোভেরা খেলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর পরিমাণ এত বেড়ে যায় যে শরীরের মধ্যে কোনায় কোনায় থাকা টক্সিন বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।ফলে আপনার শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে আপনাকে আরো শক্তিশালী এবং কর্ম সক্ষম করে তোলে।
অ্যান্টি-টিউমার এজেন্ট হিসেবে ঘৃতকুমারীর ব্যবহার
অ্যান্টি-টিউমার এজেন্ট হিসেবে ঘৃতকুমারীর গুনাগুন বহুবিধ রয়েছে। অ্যালোভেরা জেলের উপকারিতা এত পরিমান বেশি যে আসলে তা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে গাছটি কিন্তু অনেক সস্তাতেও পাওয়া যায় আমাদের দেশে। এবং প্রায়ই প্রত্যেকের ঘরেই ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার গাছ রয়েছে।
ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন বহুবিধ। ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা জেল এবং তার নির্যাস শরীরের অ্যান্টি-টিউমরোজেনিক গুণাবলী আছে কিনা পরীক্ষা করতে একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে। এটি ত্বকে লাগানো বা মুখ দিয়ে গ্রহণের ফলে টিউমরোজেনিক কোষের বৃদ্ধি হ্রাস পায়।
এরকম একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, ঘৃতকুমারী উদ্ভিদের এই কেমোপ্রোটেকটিভ গুনের কারণ ভিটামিন, এনজাইম, সেলিনিয়াম ও জিংক আকরিকের মত এটি একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এজেন্ট। এ বিষয়ে এখনও বিশদে গবেষণার কাজ চলছে যাতে টিউমার প্রতিরোধে এই উদ্ভিদ আরো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে এবং এটি ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি সস্তা বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।
আরোও পড়ুনঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঘৃতকুমারী গাছের উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন অত্যন্ত কার্যকরী। আপনি যদি সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে চান। যদি মনে করেন যে আপনার অসুখ-বিসুখ কম হোক। তাহলে আপনি প্রতিদিন নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খেতে পারেন। কারণ অ্যালোভেরার জুস খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
যার ফলে সর্দি কাশি জ্বর এবং ছোট বড় সকল অসুখ আপনাকে সহজে আক্রান্ত করতে পারে না। সেই সাথে সংক্রমনে আক্রান্ত হবার ও সম্ভাবনা কমে যায়। শরীরের বিভিন্ন সমস্যা থেকে সমাধান পেতে হলে অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম অনুসারে সময়মতো খেতে হবে তাহলে উপকার বেশি পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রভাব বাড়তে থাকে, ফলে সমস্ত শরীরের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায় এবং তার পাশাপাশি হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। যার কারণে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
কোলেস্টেরল কমাতে ঘৃতকুমারী গাছের ব্যবহার
কোলেস্টেরল কমাতে ঘৃতকুমারী গাছের ব্যবহার সম্পর্কে এখন আমরা জেনে নেবো। আমরা কেনা সুস্থ্য থাকতে চাই। সবাই চাই যেন বার বার ডাক্তারের কাছে যেতে না হয়। অসুস্থ্য হওয়ার আগেই যদি আমরা দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারি এই ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন দিয়ে তাহলে তো কোনো কথায় নেই। আর এই শরীর সুস্থ্য রাখতে ভেষজ গুনাগুন সমৃদ্ধ গাছ ঘৃতকুমারী।
অ্যালোভেরা শরীরের জন্য উপকারী তা আমরা সবাই জানি বলেই আপনারা লক্ষ্য করবেন যে আমাদের দেশে ফুটপাতেও এর জুস বিক্রি হয় এবং মানুষ তাতে ভীড় জমিয়ে পান করছে। ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা জেলের উপর বিস্তর গবেষণার পর জানা গিয়েছে, এটি শরীরে খারাপ বা লো ডেনসিটি কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো বা হাই ডেনসিটি কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।
খারাপ কোলেস্টেরল কমলে অ্যাথরোসক্লেরোসিস এর মত রোগের ঝুঁকি কমে এবং হার্ট স্বাস্থ্যকর থাকে। তাছাড়া লো ডেনসিটি কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমলে শরীরের ওজন এমনিতেই কমে যায়। নিউট্রিশনাল সাইন্স এন্ড ভাইটামিনোলজি পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণা পত্রে দেখা যাচ্ছে এলোভেরা জেল গ্রহণ করলে যকৃতে কোলেস্টেরল উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০% কমে।
ঘৃতকুমারী গাছের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা
ঘৃতকুমারী গাছের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা রয়েছে কিছু এখন আমরা সে সম্পর্কে জেনে নেই চলুন।
- অ্যালোভেরা ট্যালেক্স নিয়িমিত গ্রহণ করলে আন্ত্রিকের বা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- কিছু মানুষের অ্যালোভেরা সহ্য হয় না। কাজেই যে কোনো রূপে ঘৃতকুমারী ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- ১২ বছরের কোনো শিশুর মুখে অ্যালোভেরার জেল দেওয়া উচিত নয়। এতে করে পেটের সমস্যা এবং ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
- প্রসূতি মায়েদের পক্ষে ঘৃতকুমারী নিরাপদ নয় বলে ধরে নেওয়া হয়। কারণ ঘৃতকুমারী সেবনে কয়েকটি ক্ষেত্রে অসময়ে গর্ভপাতের ঘটনা জানা গেছে।
- সূর্যের তাপে বেরোনোর ঠিক আগে ঘৃতকুমারী না লাগানোই ভালো। তাতে রোদে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি যদি ইতোমধ্যে কোনো কারণে চিকিৎসাধীন থাকেন তাহলে আপনার খাদ্যাভাসে ঘৃতকুমারী যুক্ত করার আগে রেজিস্ট্রিকৃত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। কারণ এটি আপনার ঔষুধের বিক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে।
আসলে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের উপকারিতা তার অপকারিতার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় আমরা এর অপকারিতার কথা কেউ-ই তেমন মনে রাখিনা।
আরোও পড়ুনঃ
শেষকথাঃ ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের ঔষধি গুনাগুন
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা গাছের ঔষুধি গুনাগুন সম্পর্কে লেখা এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে সাথেই থাকুন। আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে আসে তাহলে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন।
ঘৃতকুমারী শুনে অনেকে ভুরু কোঁচকালেও কিন্তু একে আমরা সবাই অ্যালোভেরা নামেই ভালো চিনি। ঔষুধি এই ভেষজের নানা গুনের কথা পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলের মানুষের জানা। শরীরে নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে আর অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তুলতে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা অতুলনীয়।
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার জুসের মধ্যে রয়েছে যে জেল তার অনেক গুন। নিয়মিত ঘৃতকুমারীর জেল পান করলে পেটের সমস্যা দূর হয়ে যায়। আর যদি সুষম খাবারের পাশাপাশি অ্যালোভেরার রস নিয়মিত পান করেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। ঘৃতকুমারী মানব জীবনে খুবই প্রয়োজনীয়। এই গাছটি খাদ্য-পানীয় হিসেবে যেমন কার্যকর তেমনি তা বাহ্যিকভাবেও ব্যবহারযোগ্য।
রকমসকম ডট কম ওয়েবসাইট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url