কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনি কি কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? পৃথিবীতে কলা হচ্ছে ইউনিক ফুড বা সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। কারণ কলা সারা বছর পাওয়া যায়।
কলার কিন্তু বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে যেমন, চাম্পা কলা, সাগর কলা, তরকারি বা কাঁচা কলা, সবরি কলা, মানিক কলা ইত্যাদি আরো অনেক কলার নাম রয়েছে। চলুন কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচীপত্রঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কলা খাওয়ার উপকারিতা কি
- কলা কখন খাওয়া উচিত
- নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা
- সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- কাঁচা কলা ভর্তা খাওয়ার উপকারিতা
- কিডনি সুস্থ্য রাখতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- আলসার ভালো করতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- ওজন কমাতে বা বাড়াতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- হজমশক্তি বাড়াতে কলার ভূমিকা
- গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
- তারুণ্য ধরে রাখতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- মানসিক চাপ কমাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- রক্ত বৃদ্ধি করতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- কলা খাওয়ার অপকারিতা
- শেষ কথাঃ খালি পেটে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যকর কিনা
কলা খাওয়ার উপকারিতা কি
কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে প্রথমেই আমরা কলার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। আমরা সবাই জানি কলা দামে কম কিন্তু মানের দিক থেকে সেরা একটি খাবার। এটি খেতেও কিন্তু দারুণ। কলা কিন্তু অনেকেরই প্রিয় ফল এবং কলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি সমৃদ্ধ গুণাগুণের মধ্যে ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন, ফাইবার ইত্যাদি রয়েছে।
এ সকল উপাদান দেহের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। দেহের পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়া উপকারী। কলা যেহেতু মিষ্টি ফল তাই এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি মিষ্টি ফল হলেও সুগার বাড়ায় না। এর জি আই ভ্যালু বেশ ভালো হওয়ায় ডায়াবেটিসের রোগীরাও এটি নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
ডায়াবেটিসের মাত্রা যাদের বেশি তারা কলা খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। তারপরও যাদের ডায়াবেটিসের মাত্রা অতিরিক্ত তারা কলা খেতে চাইল অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কলা খান। তা না হলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গিয়ে বিপদ ঘটতে পারে। তাই সচেতন থাকুন।
আরোও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কদবেল খাওয়া যাবে কিনা
কলা কখন খাওয়া উচিত
কলা কখন খাওয়া উচিত এই নিয়ে মানুষের মনে চলছে দ্বিধা দ্বন্দ্ব। অনেকেরই মনে প্রশ্ন আছে সেটা হলো কলা কখন খাওয়া উচিত। দিনে নাকি রাতে? খালি পেটে নাকি ভরা পেটে? নাকি অন্য কোনো সময়? কলা কখন খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়? চলুন তাহলে এই সকল প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া যাক।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালে কলা খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি হয়। সকালের নাস্তায় ডিম, টোস্ট কিংবা কর্নফ্লেক্সের সঙ্গে অনেকেই কলা খান। এতে যেমন পেট ভরা থাকে তেমন পুষ্টিও পাওয়া যায়। যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন তারা অবশ্যই সকালের নাস্তায় কলা খাবেন।
তাই বলে শুধু সকালেই যে কলা খাওয়া যায় এমন নয়। দিনের অন্য সময়ও খাওয়া যায়। তবে সকালে কলা খেলে উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। সকালে কলা খেলে আপনাকে সারাদিন একটা ফুরফুরে মেজাজ ও শরীরে এনার্জি দিবে যা আপনাকে সারাদিনের ক্লান্তি থেকে দূরে রাখবে। তাই সকালে ভারি খাবার গ্রহণ করার পর একটা কলা খেয়ে নিন।
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। নিয়মিত কলা খেলে দেহে এনার্জি বা শক্তি বাড়াতে কলার রয়েছে গুরুত্বপুর্ণ অবদান। শরীরে দুর্বলতা দেখা দিলে এই ফল খাওয়া যায় এতে দ্রুত শরীরে শক্তি ফিরে আসে। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ যা রক্তে মিশে যায় ফলে দেহে প্রচুর শক্তির যোগান দেয়।
সকালের নাস্তায় অনেকেই কলা রাখেন, কখনো হয়তো টিফিনে থাকে এই ফল। খেতে হয় বলে খাওয়া নয়, প্রতিদিন কলা খেলে মেলে অনেক উপকার। এটি হয়তো বেশিরভাগ মানুষেরই জানা নেই। কলায় থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন। যে কারণে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
সব দেশেই কলার কদর আছে ভালো ফল হিসেবে। একটি ফলের মধ্যে সকল ভিটামিন আছে এমন ফলের সংখ্যা খুবই কম। এই কম সংখ্যার মধ্যে রয়েছে কলা। কলা শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেই সাহায্য করে না, বরং চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। কলা একটি পুষ্টিকর ফল যাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, পটাসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এই পুষ্টি উপাদান গুলি শরীরের জন্য বিভিন্ন উপায়ে উপকারী।
ক্যালরির চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে সহজলভ্য ফল কলা। কলায় থাকা ক্যালরির পরিমাণ ১০০। এছাড়াও এতে রয়েছে খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। সারাদিন আমাদের শরীরের অবস্থা কেমন থাকবে তা নির্ভর করে সকালে কী খাবার আমরা খাচ্ছি তার উপর।
পুষ্টিবিদদের মতে, সকালের খাবার ভারী হওয়া প্রয়োজন। তাতে সারাদিন শরীর চনমনে থাকে। ভিতর থেকে শরীর সুস্থ্য রাখে। কলার স্বাস্থ্যগুণ অনেক তাই সকালের খাবার তালিকায় কলা রাখতে হবে। তবে খালি পেটে কলা খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে। তাই সকালে কিছু খাবার আগে খেয়ে তারপর কলা খান।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। ফল খাওয়া নিয়ে বড়দের একটি পরামর্শ আমরা পেয়েছি তা হলো রাতে ফল খেতে হয়না। কোনো চিন্তা না করে সবাই তা নিয়ম ধরেই নিয়েছি। বিশেষ করে রাতে কলা খেতে বারণ করেন তারা।
কিন্তু রাতে কলা খেলে কী সমস্যা? সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, রাতে কলা খাওয়া বিপদজনক নয়। কলা যেহেতু ঠান্ডা একটি ফল, কাজেই যাদের ঠান্ডা ও সর্দি লাগার সমস্যা আছে তাদের রাতে কলা না খাওয়ায় ভালো। এসিড নিয়ন্ত্রণ করতে কলা অত্যন্ত সাহায্য করে ফলে ভাজা-পোড়া খেয়ে যাদের পেটের অবস্থা খারাপ তারা রাতে কলা খেলে পেটের জ্বালা-পোড়া কমে যায়।
রাতে ঘুমানোর আগে কলা খেলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কলা কার্বোহাইড্রেটের খুব ভালো একটি উৎস। উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার সাধারণত ঘুমের আগে না খাওয়ারই পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কলাতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকায় রাতে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
আরোও পড়ুনঃ
কাঁচা কলা ভর্তা খাওয়ার উপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক তা আগেই জেনেছি আমরা। কিন্তু শুধু কি পাকা কলায় খাওয়া যায়? না, কলা কাঁচা বা পাকা উভয় ভাবেই খাওয়া যায়। পাকা কলার মতো কাঁচা কলাও খাওয়া যায় এবং এর মধ্যেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। কাঁচা কলার মধ্যেও রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এটি মূলত সবজি হিসেবেই খাওয়া হয়। সহজলভ্য একটি সবজি হলো কাঁচা কলা।
কাঁচা কলা দিয়ে যে শুধু ভর্তায় খাওয়া যায় এমন কিন্তু নয়। কাঁচা কলার ঝোল খেতেও বেশ সুস্বাদু এবং উপকারীও।এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফেট প্রোবায়োটিক ইত্যাদি।এটি বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। কাঁচা কলা ভর্তায় রয়েছে অনেক উপকারিতা। নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
এতে রয়েছে পটাশিয়াম যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কাঁচা কলা কোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ দূর করতে বেশ ভূমিকা রাখে।পাশাপাশি কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধেও এটি বেশ কার্যকর। কাঁচা কলা খেলে আয়রনের ঘাটতি কমে যায়। কাঁচা কলা ডায়রিয়া রোগীর জন্যও বেশ উপকারী।
কিডনি সুস্থ্য রাখতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
কিডনি সুস্থ রাখতে কলা খাওয়ার উপকারিতা বহুগুণ রয়েছে। কিডনির হাল বেহাল হলে দেরি না করে ঝটপট এই অঙ্গকে সুস্থ-সবল রাখার কাজে লেগে পড়তে হবে। কিডনিকে ভালো রাখতে চাইলে আজই কলার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলুন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে ঠিক কিভাবে কিডনি সুস্থ রাখা যেতে পারে?
আসলে আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি অঙ্গ হলো কিডনি। এই অঙ্গটি প্রস্রাব তৈরি থেকে শুরু করে দেহ থেকে বিভিন্ন রেচন পদার্থ বের করে দেয়, অত্যন্ত জরুরি কিছু হরমোন সহ একাধিক কাজ একা হাতে সামলায় কিডনি। তাই সুস্থ সবল জীবন কাটাতে চাইলে কিডনির হাল ফেরাতেই হবে। আর এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে কলা। কলায় পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়।
কলার পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কিডনির কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায় যেসব ব্যক্তি প্রতিদিন কলা খান তাদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ ভাগ কম থাকে। কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে কলা। মূত্রতন্ত্রের ইনফেকশন কমাতে এর অবদান রয়েছে।
আলসার ভালো করতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
আলসার ভালো করতে কলার ভূমিকা অপরিসীম। ফল মানেই তা উপকারী। পুষ্টিবিদ থেকে চিকিৎসক, সবাই নিয়ম করে ফল খাওয়ার কথা বলে থাকেন। সুস্থ থাকতে হলে ফল খাওয়ার বিকল্প নেই। আলসারের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। আলসার থাকলে কলা খাওয়া যেতেই পারে।
পেটের আলসার থেকে দূরে থাকতে কলা হতে পারে অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। তাই আলসার হলে কলা খান। কলার মিউসিলেজ পাকস্থলীর ভেতরের প্রাচীরে ক্ষতিগ্রস্ত মিউকাস পর্দাকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। কলার ফাইবার গ্যাস্ট্রিক হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
পাকা ও কাঁচা দুই অবস্থাতেই কলাতে থাকে প্রচুর ব্যাকটেরিয়ারোধী উপাদান যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করে। তাই পেটের আলসারে ভুগলে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দিনে তিনটি করে কলা খেতে পারেন। কলা প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে শরীর সুস্থ রাখে।
ওজন কমাতে বা বাড়াতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
ওজন কমাতে বা বাড়াতে কলা খাওয়ার উপকারিতা কি আসলেই পাওয়া যায়? কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে আরেকটি প্রশ্ন সবার মনে। সেটা হলো কলা খেলে ওজন বাড়ে নাকি কমে এ নিয়ে রয়েছে অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ। অনেকে মনে করেন কলায় বেশি শর্করা ও ক্যালরি থাকায় এটি খেলে ওজন বাড়ে। কারণ এ সকল খাদ্য উপাদান সাধারণত ওজন বাড়ায়।
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ ও শর্করা সমৃদ্ধ ফল হচ্ছে কলা। তাই কলা খেলে পেট ভরা মনে হয়, ক্ষুধাও কমে যায়। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া কমে গেলে ওজন বাড়তে পারবে না কোনো ভাবেই। আর শরীরে বেশি ইনসুলিন থাকলে মানুষের ওজন বেড়ে যায়। কলা আমাদের রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে ফেলে বলে ইনসুলিন হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকে ফলে ওজন বাড়তে দেয়না।
কিন্তু কলায় শুধু শর্করা ও ক্যালরি ছাড়াও আরো অনেক উপাদান রয়েছে। এ সকল উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো ফাইবার।এই ফাইবার মানুষের হজমশক্তি বাড়ায়। সহজে খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে এবং এর পাশাপাশি এই ফাইবার থাকার কারণে মানুষের পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে ফলে দীর্ঘ সময় খাবার না খেয়েও থাকা যায়। এর কারণে দেহের ওজন বাড়ার আশংকা কম থাকে। তাই বলা যায়, কলা খেলে ওজন বাড়ে না বরং ওজন কমে।
আরোও পড়ুনঃ পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুনাগুন
হজমশক্তি বাড়াতে কলার ভূমিকা
হজমশক্তি বাড়াতে কলার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে হজমশক্তি বাড়াতে কলার ভূমিকা কতটুকু তা এখন আমরা জেনে নিবো। কলা আমাদের গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল অঙ্গগুলোর কোনো রকম প্রদাহ তৈরি না করেই সহজে পরিপাক হতে পারে।
কলায় থাকে একধরনের প্রতিরোধী স্টার্চ যা পরিপাক না হয়ে বৃহদন্ত্রে গিয়ে অবমুক্ত হয়। বৃহদন্ত্রে এই স্টার্চ স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে পরিণত হয়। ডায়রিয়া হলে যেসব খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায়, সেসব পূরণে কলার জুড়ি মেলা ভার। চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করার ৩০ মিনিট পর একটি পাকা কলা খেলে দ্রুত চর্বি হজম হয়ে যায়।
চর্বির ক্ষতিকর অংশ খুব সহজে পরিপাক হয়ে থাকে কলা খাওয়ার ফলে। কলায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার ফলে কলা হজম হতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূরে রাখতে সাহায্য করে পেকটিন নামক এক ফাইবার যা কলায় থাকে।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের আরো বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কারণ তখন নিজের সাথে আরোও একজনের দায়িত্ব নিতে হয়। একটি প্রাণ নিজের মধ্যে বড় করে পৃথিবীতে জন্ম দেওয়া সহজ ব্যাপার নয়।
তাই গর্ভবতী মেয়েদের একটু বেশি সচেতন থাকতে হয়। কোন খাবারটি খেলে উপকার হবে, কোনটি খেলে ক্ষতিকর তা জেনে তারপর খেতে হয়।গর্ভাবস্থায় কলা একটি উপকারী ফল। বিশেষজ্ঞদের মতে, কলাতে বি ভিটামিনে পূর্ণ যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রাকৃতিক ভাবে বমি রোধ করতে কলা সাহায্য করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে আয়রনের মাত্রা কম থাকা। কলায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকার কারণে দেহে শক্তির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। কলা প্রাকৃতিক আয়রন সম্পূরক হিসেবে কাজ করে। তাই প্রতিদিন খাবারের তালিকায় কলা যুক্ত করুন।
তারুণ্য ধরে রাখতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে আরো একটি উপকারিতার বিষয় সম্পর্কে জানবো তা হলো তারুণ্য ধরে রাখতে কলা খাওয়ার ভুমিকা? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, আসলে আমরা বৃদ্ধ হতে চাই না কেউই। যৌবনটা যেন চিরজীবন থেকে যায় মনে মনে সবারই এই ইচ্ছা রয়েছে।
এমন কাউকেই পাওয়া যাবে না যে, যৌবন রেখে বার্ধক্যকে পছন্দ করে। বার্ধক্য একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।তবে দেখা গেছে কেউ কেউ তুলনামুলক দ্রুত বুড়িয়ে যান। আবার কারো চেহারা দেখে বয়স বোঝার উপায় থাকে না, বয়সের তুলনায় চেহারায় দেখা যায় তারুণ্যের ছাপ। কলার ভিটামিন ও অন্যান্য উপাদান কোষকে অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
কলা ত্বকের কোষের ভিতরে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে তাই ত্বকের লাবণ্যতা বজায় থাকে। তাই প্রতিদিন খাবার তালিকায় একটা করে হলেও কলা রাখা প্রয়োজন। এছাড়াও কলা খাওয়ার পাশাপাশি কলা কিন্তু ত্বকেও লাগানো যায়, এতে ত্বকের ময়লা পরিস্কার করে এবং ত্বককে করে তোলে মসৃণ।
মানসিক চাপ কমাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
মানসিক চাপ কমাতে কলার উপকারিতা আছে কিনা আজকে সেটাই জানবো আমরা। কলা পুষ্টির উৎস। ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড কলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, এটি রক্তে মিশে যাওয়ার পর রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সেরোটোনিনে রূপান্তর হয়।
এই উপাদান মন ভালো রাখার পাশাপাশি আরাম প্রদানেও সহায়তা করে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।আনন্দদায়ক অনুভূতি সৃষ্টির জন্য সেরোটোনিন হরমোন কাজ করে। সেরাটোনিনের সঠিক মাত্রা আপনার মন ভালো রাখবে এবং মানসিক চাপ কমাবে। সেরোটোনিন, মেলাটনিন হরমোনে রূপান্তরিত হয় যা ঘুমচক্রে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়ামের মতো অত্যাবশ্যকীয় কিছু খনিজ উপাদান কলাতে আছে যা পেশিতে আরাম দিতে সহায়তা করে। আমাদের অনেকেরই ঘুমের সময় পেশিতে টান ধরে, এটি একটি খুব সাধারণ পরিচিত সমস্যা। এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে নিয়মিত কলা খেলে। এর মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম যা বিষণ্ণতা দূর করতে সাহায্য করে। বিছানায় যাওয়ার আগে নিয়ম করে কলা খাওয়া মানসিক ভাবে উপকারী।
রক্ত বৃদ্ধি করতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
রক্ত বৃদ্ধি করতে কলা খাওয়ার ভূমিকা তো অবশ্যই রয়েছে। রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমে গিয়ে রক্ত স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগ হয়। এই রোগ হলে শরীর ফ্যাকাশে লাগে, ক্লান্তিবোধ ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। কলায় থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আয়রন রক্তে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে।
এছাড়া কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি৬ যা রক্তের লোহিত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কলার ভেতরে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে বলে হাড় থেকে রক্ত কণিকা ভালো মাত্রায় উৎপন্ন হয় এবং রক্ত স্বল্পতা কমায়। এছাড়াও কলায় থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এছাড়াও আমরা কলার পাশাপাশি কলার মোচাও খেতে পারি। কারণ কলার মোচাতে রয়েছে ফাইবার যার ফলে উচ্চ মাত্রার লৌহ উপাদান এবং লোহিত কণিকার উৎপাদন বাড়ায়। ফলে এতে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত কলার খাওয়ার পাশাপাশি কলার মোচাও খেতে পারেন। রক্ত বৃদ্ধি করতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী।
কলা খাওয়ার অপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে এতোক্ষণ আমরা কলার উপকারিতা সম্পর্কেই জানলাম এখন আমরা কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানবো। আসলে কলার অপকারিতা বলতে গেলে তেমন একটা নেই। তবে কলার অপকারিতার সম্মুখীন আপনাকে হতে হবে খালি পেটে কলা খেলেই।
প্রয়োজনের তুলনায় যেকোনো খাবার অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। তাই কলা বেশি খেলে কলার যৌগগুলি মাইগ্রেনের মতো সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এছাড়াও যাদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে বেশি মাত্রায় কলা খেলে তা বেড়ে যেতে পারে।
যাদের ক্রনিক কিডনি রোগের সমস্যা রয়েছে তাদের এটি এড়িয়ে চলায় ভাল হবে। কোনো খাবারই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ভালো নয়। তবে আবার কলার অপকারিতা জেনে কলা খাওয়া বাদ দিয়ে দিবেন না। কলা খাওয়ার অপকারিতার তুলনায় উপাকারিতাই বেশি তাই প্রতিদিন অন্তত ১-২টা কলা খাওয়ার অভ্যেস করুন।
আরোও পড়ুনঃ ঘৃতকুমারী গাছের গুনাগুন
শেষ কথাঃ খালি পেটে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যকর কিনা
কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে নিয়ে লেখা আজকের আর্টিকেলটি পড়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। আপনার যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে ভাল লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
আমরা আগেই জেনেছি যে কলা সাধারণত যেকোনো সময়ই খাওয়া যায়। বিশেষ করে কলা সকালে খাওয়া বেশি ভালো। কিন্তু সকালে খালি পেটে খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর? কলা নিঃসন্দেহে একটি উপকারী ফল। তবে খালি পেটে কলা খেলে উপকারের থেকে বেশি অপকার হতে পারে।
পুষ্টিবিদরা বলেন, কলা সকালে খেতে পারেন তবে তা অবশ্যই খালি পেটে নয়।কিছু না কিছু খেয়ে তারপর কলা খাবেন। খালি পেটে কলা খেলে এসিড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া খালি পেটে কলা খেলে রক্তে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় ফলে এর প্রভাব হৃদযন্ত্রের উপরও পড়তে পারে।
কলার অপকারিতার চেয়ে উপকারিতায় বেশি তাই আমরা প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কলা রাখার চেষ্টা করবো। তবে যাদের কলা খাওয়ায় সমস্যা রয়েছে তারা কলা খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রকমসকম ডট কম ওয়েবসাইট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url