নয়নতারা গাছের ঔষধি গুণ

 নয়নতারা গাছের ঔষধি গুণ সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? আগে নয়নতারা গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণায় ছিলো না। পরবর্তীতে আমি এর উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করেছি এবং জেনেছি।

নয়নতারা-গাছের-ঔষধি-গুণআজকে আপনাদের সাথে নয়নতারা গাছের ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে শেয়ার করবো। নয়নতারা গাছের ঔষধি গুণ থেকে আমরা মেধা হ্রাস, অনিয়মিত ঋতুস্রাব ও লিউকোরিয়া, টেনশন, স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, সন্ধিবাত, কৃমিরোগ, ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ থেকে সহজেই রেহাই পেতে পারি।

পেজ সূচীপত্রঃ নয়ন তারা গাছের ঔষুধি গুণ বা উপকারিতা

নয়ন তারা গাছের বৈশিষ্ট্য

নয়নতারা গাছের বৈশিষ্ট্য কি তা আগে জেনে নেওয়া যাক এরপর আমরা নয়নতারা গাছের ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে  জানবো। ইতিহাস বলছে নয়ন তারা গাছের জন্ম ফ্রান্সে। নানা ওষুধ তৈরির কারণেই ১৮ শতকে ফরাসিরা নয়নতারা চাষ শুরু করেছিলো। পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এই গাছটির দেখা পাওয়া যায়। সেখানেও মূলত নয়নতারা গাছটি চিকিৎসার জন্যই লাগানো হতো।

এরপর বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ আরোও কয়েকটি দেশে এর দেখা পাওয়া যায়। তবে নয়ন তারা ফুলকে অনেকেই মাদাগাস্কার ও আফ্রিকার নানা দেশেই প্রথম এই ফুলটির দেখা মেলে। তবে এই বক্তব্যের সপক্ষে সেভাবে কোনো নথির সন্ধান মেলেনি। তাই এর জন্ম কোথায়, সেই নিয়ে বিতর্ক চলছেই। নয়ন তারা গাছ সাধারণত গুল্ম জাতীয় এবং বর্ষজীবী উদ্ভিদ।২/৩ ফুটের বেশি বড় হতে দেখা যায় না। 

নয়ন তারা গাছটি অনেক বছর বেঁচে থাকে। নয়ন তারা ফুল পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট হয়ে থাকে এবং এটি গোলাপী, সাদা, বেগুনী রঙের ফুটে থাকে।এটি বারোমাসী উদ্ভিদ তবে গরমকালের তুলনায় শীতকালে নয়ন তারা গাছের তুলনামূলক কম বৃদ্ধি পায়।সারা বছরই এই গাছে ফুল ফুটে থাকে। নয়নতারা গাছটির তেমন কোনো পরিচর্যা নিতে হয়না কিন্তু এর থেকে উপকার পাবেন ষোলো আনা। 

নয়নতারা মুক্তি দিবে অনিয়মিত ঋতুস্রাব ও লিউকোরিয়া থেকে

অনিয়মিত পিরিয়ড, মাসে একাধিকবার পিরিয়ড, পিরিয়ডকালীন পেট ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যায় আজকের দিনে ৯৯ শতাংশ মেয়েরা ভুগে থাকেন। প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ নয়নতারা ঔষধি গাছ এই রোগ সারাতে সাহায্য করে।। এই ক্ষেত্রে নয়নতারা ঔষধি গাছটির ব্যবহারে রোগটিকে প্রতিহত করা সম্ভব।

উপরের যে রোগের কথা গুলো বলা হয়েছে সেটির জন্য নয়নতারা গাছের নির্যাস টানা দুই মাস সেবন করলে ফল পাওয়া যাবে।এছাড়াও লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাবের মতো অসুখ থেকে মুক্তি মিলবে। লিউকোরিয়া একটি অসাধ্যের পর্যায়ভুক্ত রোগ। এটি বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়। এই সমস্যার জন্য মেয়েরা দুর্বল হয়ে পড়েন।

এই রোগ সারাতে নয়ন তারা পাতা, ফুল ও মূলের সেবন বিশেষ উপকারী। নয়নতারা গাছটির পাতা, ফুল ও ডালে বহু মূল্যবান রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায়। ৭০টিরও বেশি অ্যালকালয়েড বা উপক্ষার পাওয়া যায় এই গাছ থেকে। ভিনক্রিস্টিন ও ভিনব্লাস্টিন নামের অ্যালকালয়েড বা উপক্ষার দুটি লিউকোরিয়া রোগে বিশেষ ব্যবহার রয়েছে।

নয়নতারা ক্যান্সারের মতো রোগকে দূরে রাখে

নয়নতারা গাছের ঔষধি গুণ ক্যান্সারের মতো রোগকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। গত ৩২ বছরে আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েই চলেছে। তাই বুঝতেই পারছেন হাতে সময় থাকতে থাকতেই যদি আমরা সাবধান না হই তাহলে বিপদ। তাই আমাদের সময় থাকতেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

ভাবছেন সাবধান হবে কিভাবে? প্রতিদিন এই ফুলের পাপড়ি ভিজিয়ে চা তৈরি করে পান করলে দেখবেন ফল মিলবে হাতে-নাতে। কারণ নয়নতারা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান যা ক্যান্সার কোষকে  মেরে ফেলে। ফলে এমন রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা আর থাকেনা।

এমনকি নয়নতারা ব্লাড ক্যান্সার রোগে বেশ কার্যকরী। এই রোগে আক্রান্ত হলে নয়নতারা গাছের কচি ডালের টাটকা রস ১০ মিলিলিটার বা ২ চা চামুচ পরিমাণ নিয়ে কয়েকদিন রোজ সকালে খেলে এ রোগের উপশম হতে সাহায্য করে। অনেক বিজ্ঞানীরা এ গাছের ডাল ও পাতা থেকে ক্যান্সার নিরাময়ের প্রায় ৭০টি ওষুধ আবিষ্কার করেছেন।

নয়নতারা মেধাশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে

নয়নতারা মেধাশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে সেটা শুনে কি অবাক হচ্ছেন? আসলে অবাক হবারই কথা। কারণ আমরা তো অনেকেই জানিনা যে নয়ন তারা একটি ঔষধি গাছ। নিয়মিত নয়ন তারা গাছের ফুল ও পাপড়ির চা খেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়।এমনকি মনোযোগ ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে।

নয়ন তারা গাছটি আসলে ব্রেন টনিক। নয়ন তারা গাছের ফুল, মূল ও পাতা ২ গ্রাম পরিমাণে ১ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে নিন। পানিটুকু ছেঁকে তা ফুটিয়ে আধা কাপ বানিয়ে চা তৈরি করে নিন। এরপর সেই পানি অর্ধেক ভাগ করে সকাল-বিকাল টানা ১ মাস পান করুন। এছাড়াও চা পানের পাশাপাশি যদি নয়ন তারা গাছের পাতা খাওয়া যায়। 

তাহলে দেহে ভিকামিন নামক একটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যার কারণে ব্রেনে রক্তের প্রবাহ এতোটাই বেড়ে যায় যে কগনেটিভ ফাংশান এর উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। ফলে অসময়ে স্মৃতিলোপ পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কমে যায়। এছাড়াও নয়ন তারা ফুলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান চোখের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।ফলে অসময়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যার আশঙ্কা কমে যায়।

নয়নতারা সেবনে কৃমিরোগ থেকে মুক্তির উপায়

কৃমিরোগ সাড়াতে নয়নতারা গাছের ঔষধি গুণ এর কোনো তুলনা নেই। নয়ন তারা গাছের এতো এতো উপকারিতা রয়েছে যে বলে শেষ করা যাবে না। ছোট থেকে বড় সব ধরনের রোগের মহৌষধ হচ্ছে নয়নতারা গাছ। নয়নতারা নিয়মিত সেবন করলে কৃমিরোগ পালাতে বাধ্য হবে। চলুন তাহলে কিভাবে নয়নতারা গাছের ঔষধি সেবন করবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

প্রথমে দুই গ্রাম কাঁচা আর যদি শুকনো হয় তাহলে এক গ্রাম পরিমাণের নয়ন তারা গাছের ফুল, মূল ও পাতা একসঙ্গে এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই পানিটা ছেঁকে ফুটিয়ে অর্ধেক করে নিন। এরপর ওই পানিটা দুভাগে ভাগ করে সকালে এবং রাতে ৮ থেকে ১০ দিন পান করলে কৃমির সমস্যা চলে যাবে। এটি ছোটদের দেবেন না। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

নয়নতারা স্কিন সমস্যা বা চর্মরোগ দূর করে

বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় মানুষের স্কিন সমস্যা বা চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও এলার্জির প্রকোপও বেশিরভাগ দেখা মিলছে। তবে আমরা প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে এসব রোগ ভালো করতে কেউই চাইনা। কারণ আমরা এতোটাই আরামপ্রিয় হয়ে গেছি যে বাটাবাটির ঝামেলা আমাদের কাছে বিরক্ত মনে হয়। কিন্তু এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যে নেই সেটা জানলেও আমরা মানতে চাইনা। 
নয়নতারা-স্কিন-সমস্যা-বা-চর্মরোগ-দূর-করে
এসব রোগের সমধান রয়েছে নয়ন তারা গাছে। ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ নয়ন তারা গাছ ব্যবহারে স্কিন সমস্যা বা চর্মরোগ দূর করতে সাহায্য করে। নয়ন তারা গাছের পাতা সেদ্ধ করা পানি ব্যবহারে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও সতেজ। এছাড়াও নয়ন তারা পাতার সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে বেটে ফেস প্যাক তৈরি করে মুখে লাগালে ব্রণ দূর হবে এবং ছোপ ছোপ দাগও চলে যাবে।

তবে যাদের হলুদে এলার্জি আছে তারা শুধুমাত্র নয়ন তারা পাতার রস লাগাতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার স্কিন সমস্যার পাশাপাশি এটি বিভিন্ন চর্ম রোগের জন্য বেশ কার্যকরী। নয়ন তারা গাছের পাতা বেটে তার রস দিয়ে ত্বক পরিস্কার করলে চুলকানি এবং ফাঙ্গাস জনিত সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়।

নয়নতারা সেবনে অ্যাংজাইটি, টেনশন, স্ট্রেসের প্রকোপ কমে

নয়নতারা গাছের ঔষধি গুণ এর সাহায্যে অ্যাংজাইটি, টেনশন, স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নয়ন তারা ফুলের এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা রক্তে মেশামাত্র শরীরের ভেতরে কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে ফলে অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমে, এতে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এমনকি স্ট্রেস লেভেল কমতে সাহায্য করে।

আমাদের দেশে অধিকাংশই মানুষ অ্যাংজাইটি, টেনশন, স্ট্রেসের মতো বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। আর এ কথা ভুলে গেলে চল্বেনা যে স্ট্রেসের কারণে আমাদের শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। আমরা সবাই জানি যে স্ট্রেসের কারণে আমাদের শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে তাই সাবধান হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি।

আজকাল বেশ কিছু রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে। রোজকার চাপ থেকে তৈরি হয় অ্যাংজাইটি, হাইপার টেনশন, ভুলে যাওয়ার সমস্যা, ঘুম না হওয়া ইত্যাদি। একমুঠো শুকনো নয়ন তারা ফুল ও পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে চায়ের মতো করে তৈরি করুন। এরপর তা ছেঁকে নিয়ে সাথে এক চামুচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।

নয়নতারা গাছের নির্যাস সাদা চুলকে কালো করে

আমরা এতোমধ্যেই জেনে ফেলেছি নয়নতারা গাছের ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে। উপরের নামটি পড়ে কিছুটা অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়? এরকম আবার কখনো সম্ভব হয় নাকি? কিভাবে সাদা চুলকে কালো করে তুলবে নয়ন তারা? হ্যাঁ, অবাক হবারই কথা কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে চুল কালো করার তরিকা খুব একটা জানি না। আমরা শুধু বাজার থেকে কেমিক্যালযুক্ত প্যাক কিনে চুল কালো করি সাময়িকের জন্য।

কিন্তু এতে করে চুলের অনেক ক্ষতি হয় এবং চুল পড়ার প্রকোপও বেড়ে যায়। তাছাড়া যাদের বয়সের আগেই চুল পাকা শুরু করেছে তাদের জন্য স্থায়ী সমধান হতে পারে এটি। নয়নতারা গাছ ব্যবহার করলে সাদা চুল কালো করা সম্ভব। আপনার চুলের পরিমাণ অনুযায়ী নয়নতারা গাছ থেকে পাতা ও ফুল তুলে নিয়ে তা পরিস্কার করে বেটে এর থেকে রস বের করে নিন।

এবার তুলোর বলের সাহায্যে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে রাখুন এবং পরেরদিন শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে টানা ২-৩ মাস ব্যবহার করলে দেখবেন চুলের গোড়া থেকে সাদা চুল কালো হতে শুরু করেছে।

নয়ন তারা ফুলের চা সেবন

বাড়ির আশেপাশে, বাগানের কোনায় অবহেলিত ভাবে বেড়ে ওঠা নয়নতারা গাছটি আসলে একটি জীবনধারী ভেষজ উদ্ভিদ। আয়ুর্বেদের গুণাবলী অপার। নয়ন তারা গাছের ঔষধি গুন অনেক। এক মুঠো নয়ন তারা ফুলের পাপড়ি ও পাতা একত্রে শুকিয়ে নিন।
নয়ন-তারা-ফুলের-চা-সেবন
এবার গুঁড়ো করা নয়ন তারা পাপড়ি ও পাতা ২/৩ চামুচ নিয়ে এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে পানিটা মিনিট দুয়েক ফুটিয়ে নিন। এবার পানীয়টি মিনিট দশেক রেখে দেওয়ার পর ছেঁকে নিয়ে এবার তাতে এক চামুচ মধু মিশিয়ে পান করুন।প্রতিদিন সকালে খাবারের আগে খালি পেটে যদি এই চা খেতে পারেন তাহলে দ্রুত উপকার পাবেন।

নয়ন তারা ফুলের পাপড়ি থেকে তৈরি চা খেলে অনিদ্রার সমস্যা দূরে পালাতে সময় লাগে না।এছাড়াও নয়ন তারা ফুলের চা নিয়মিত পান করায় ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।নয়নতারা ফুলের রস দিয়ে পানি ফুটিয়ে সেটা দিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের ব্যাথাও কমে যায়।

নয়নতারা আরোও বেশ কিছু রোগের চিকিৎসায়

নয়নতারা আরোও বেশ কিছু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। যেহেতু নয়ন তারা একটি ঔষধি গাছ তাই এটি সেবনের ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কার্যকরী। ৮ থেকে ১০টি নয়ন তারা গাছের পাতা ও কচি ডাল বেটে রস বের করে নিন। এরপর ১০ মিলিলিটার বা ২ চা চামুচ পরিমাণ রস নিয়মিত সকালে বা রাতে শুতে যাওয়ার আগে পান করুন, এতে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং হার্ট সুস্থ্য থাকবে।

নয়ন তারা গাছের ঔষধি গুণ সন্ধি বাতজনিত ব্যাথার চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী। গাঁটে গাঁটে ব্যাথা তাতে ফোলা বা প্রদাহ কিছুই নেই এরকম সমস্যার জন্য নয়ন তারা গাছের ঔষধি গুণ অত্যন্ত কার্যকরী। কাঁচা বা শুকনো নয়ন তারা গাছের নির্যাস তিলের তেলের সাথে জ্বাল করে নিয়ে ব্যবহার করলে যন্ত্রনার উপশম হয়। নয়ন তারা গাছের ফুল, পাতা ও মূল মুখে সেবন করলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।

নয়ন তারা গাছের পাতা এবং ফুলে এতো রকমের উপকারী উপাদান রয়েছে যে সেগুলো একাধিক রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। যারা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন তারা যদি নিয়মিত মলদ্বারে নয়ন তারা ফুল থেঁতো করে লাগাতে পারেন তাহলে উপকার মিলবে দ্রুত।এক্ষেত্রে যন্ত্রণা তো কমবেই সাথে রোগের প্রকোপও  কমবে দ্রুতই। 

পোকা মাকড় কামড়ালে সেখানেও নয়ন তারা গাছের ঔষধি গুণ অত্যন্ত কার্যকরী। মৌমাছি, ভোমরা, বোলতার কামড়ে অসহ্য রকম যন্ত্রণা হয়। নয়ন তারা গাছের গুণাগুণ এতোটাই কার্যকরী যে মৌমাছি, ভোমরা, বোলতা, কাঠপিঁপড়া ইত্যাদির হুলের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।দ্রুত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নয়ন তারা পাতা থেঁতো করে তার রস বা বাটা পাতা আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। এতে কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বালা-যন্ত্রণা কমে যাবে।

এছাড়াও নয়নতারা গাছ ব্যবহারে হাঁপানি, ডেঙ্গু, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই নিয়মিত এটি ব্যবহার করুন।

নয়নতারা গাছের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা

এতোক্ষণ আমরা নয়ন তারা গাছের ঔষধি গুণ সম্পর্কে জানলাম। এর যেমন একাধিক গুণাবলী রয়েছে তেমনি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতাও রয়েছে। চলুন তাহলে নয়নতারা গাছের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

  • যাদের লিভার, পেট সংক্রান্ত সমস্যা, হার্ট, কিডনি বা ফুসফুসের রোগ রয়েছে তাদের নয়নতারা ফুলের চা খাওয়া উচিত নয়। এমনকি যারা লো ব্লাড প্রেসারের রোগী তাদেরকেও এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
  • সবেমাত্র যারা মা হয়েছেন তাদেরও এই নয়নতারা ফুলের চা না খাওয়ায় ভালো। বিশেষজ্ঞরাও এটি খেতে বারণ করেন।
  • যদি সামনে আপনার কোনো অপারেশন থেকে থাকে তাহলে নয়নতারা ফুলের চা পান করা থেকে বিরত থাকুন। এমনকি অপারেশনের পরেও কয়েক মাস এটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
  • নয়ন তারা ফুলের চা দিনে ৪ কাপের বেশি পান করা যাবে না। এর বেশি পান করলে ব্লাড প্রেসার লো, মাথা যন্ত্রণা, খিদে কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

শেষ কথাঃ রোগ প্রতিরোধে নয়নতারা গাছ

নয়নতারা গাছের ঔষধি গুণাগুণের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে নিয়ে লেখা আজকের আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হতে পেরেছেন বলে আশা করছি। যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। অনেক সময় আমাদের শরীরে এমন কিছু রোগ বাসা বাঁধে যা আমরা আগে থেকে টেরও পাইনা এবং যখন রোগ ধরা পড়ে তখন আমাদের আর কিছুই করার থাকেনা।

কিন্তু আমরা যদি আগে থেকে নয়ন তারা গাছের নির্যাস ব্যবহার করে শরীরে এর প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলি তাহলে উপরিউল্লিখিত প্রাণঘাতী রোগ সমূহ থেকে সহজেই রেহাই পেতে পারি।তাই ঘরোয়া উপায়ে নয়ন তারা গাছের ঔষুধি গুণাগুণ দ্বারা রোগ প্রতিরোধের ম্যাজিক্যাল টিপস দিয়ে দিলাম।

নয়নতারা গাছটি যে একটি ঔষধি গাছ সে বিষয়ে আমি পুরোপুরি অজ্ঞাত ছিলাম। আমাদের দেশে নয়ন তারা গাছটি খুবই সহজলভ্য একটি ভেষজ উদ্ভিদ। তাই আসুন দেরি না করে আজই টবে নয়নতারা ফুলের গাছ লাগাই এবং রোগ প্রতিরোধে সচেতন হই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রকমসকম ডট কম ওয়েবসাইট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url