সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কি আপনি জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকের পোস্টটি সম্পূর্ণ আপনার জন্য। সজিনা আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। এটি বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া হয়।সজিনার বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা ওলিফেরা। সজিনার পাশাপাশি সজিনা পাতারও অনেক উপকারিতা রয়েছে। গবেষকরা সজিনা পাতাকে সুপার ফুট বলে থাকেন। সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এটির খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।
পেজ সূচীপত্রঃ সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- সজিনা গাছের বৈশিষ্ট্য এবং এর চাষ
- সজিনা পাতার বিস্ময়কর পুষ্টি গুণাগুণ
- ডায়াবেটিস রোগীর সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
- ত্বক ও চুলের যত্নে সজিনা পাতার ব্যবহার
- সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
- সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা
- ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
- সজিনা পাতার বহুমুখী ব্যবহার
- গর্ভাবস্থায় সজিনা ডাটা খাওয়া যাবে কিনা
- গর্ভাবস্থায় সজিনা পাতা খেলে কি হয়
- সজিনা পাতার রসের গুনাগুন বা উপকারিতা
- সজিনা পাতার ক্ষতির দিক বা অপকারিতা
- শেষ কথাঃ হাজার গুণের পাতা সজিনা পাতা
সজিনা গাছের বৈশিষ্ট্য এবং এর চাষ
সজিনা গাছের বৈশিষ্ট্য ও এর চাষ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে প্রথমে এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। সজিনা একটি বৃক্ষ
জাতীয় গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা ওলিফেরা। সজিনার কাঁচা লম্বা ফল সবজি
হিসেবে খাওয়া হয়, পাতা খাওয়া হয় শাক হিসেবে। এটি খরা সহিষ্ণু ও গ্রীষ্মপ্রধান
অঞ্চলের একটি উদ্ভিদ।
ডাল ও বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলেও আমাদের দেশে সাধারণত
ডালের মাধ্যমে বা অঙ্গ জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করানো হয়। গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত ডাল রোপনের
উন্মুক্ত সময়। এটি একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। সজিনা গাছের পাতাকে বলা হয়
অলৌকিক পাতা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। গবেষকরা সজিনা পাতাকে বলে
থাকেন নিউটিশন্স সুপার ফুড এবং সজিনা গাছকে বলা হয় মিরাকেল ট্রি।
১২ মাসেই সজিনা জাত প্রায় সারা বছরই বার বার ফলন দেয়। এই গাছে সব সময় ফুল ও
কচি ফল দেখা যায়। আমাদের দেশে দুই থেকে তিন প্রকার সজিনা পাওয়া যায়। সজিনা চাষ
করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। এদিকে কম খরচে অধিক লাভের কারণে সজিনা
চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষকেরা। সজিনা মাটিতে চারা রোপনের ছয় মাসের মধ্যে গাছে ফল বা
ডাটা ধরে এবং সারা বছরই তা পাওয়া যায়।
সজিনা গাছের তেমন একটা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তবে সজিনা গাছের গোড়া সব সময়
আগাছা মুক্ত রাখতে হয়। শুধুমাত্র গরু ছাগলের উপদ্রব ঠেকানো সম্ভব হলেই সজিনা
গাছগুলো বড় হয়ে ওঠে এবং তাতে ভালো ফলন হয়। তবে ইউরিয়া বা জৈব সার প্রয়োগ করলে
গাছ বেশি ভালো হয়। রাস্তা, বাঁধের ধারে, যে কোন ফাঁকা জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে
সজিনা গাছ লাগানো যায়। একটি পূর্ণাঙ্গ সজিনার গাছ বছরে ১৬০০টি পর্যন্ত সজিনার ফল
উৎপাদন করে থাকে।
আরোও পড়ুনঃ
সজিনা পাতার বিস্ময়কর পুষ্টি গুণাগুণ
সজিনা পাতার বিস্ময়কর পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে অনেকেই মনে প্রশ্ন
রয়েছে আসলেই কি সজিনা পাতার পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে কিনা। এখন পর্যন্ত অনেকেরই সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে ধারণা নেই। চলুন সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে সজিনা পাতার পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। প্রতি ১০০ গ্রাম
সজনে পাতা থেকে পাওয়া পুষ্টিগুণসমূহ-
পুষ্টি উপাদানের নাম | পরিমাণ |
---|---|
জ্বলীয় অংশ | ৮৩.৩ গ্রাম |
খনিজ | ১.৯ গ্রাম |
আঁশ | ৪.৮ গ্রাম |
খাদ্য শক্তি | ৬০ কিলোক্যালরি |
প্রোটিন | ৩.২ গ্রাম |
চর্বি | ০.১ গ্রাম |
শর্করা | ১১.৪ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২১.০ মিলিগ্রাম |
লোহা | ৫.৩ মিলিগ্রাম |
ক্যারোটিন | ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন বি১ | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ১.২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৪৫.০ মিলিগ্রাম |
পুষ্টি ঔষধিগুণ ও সারা বছর ফলন পাওয়া যায় বলে বাড়ির আঙিনায় জন্মানো এই গাছকে মাল্টিভিটামিন বৃক্ষও বলা যায়।সজিনা পাতার মধ্যে রয়েছে বিপুল পরিমাণে খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন। পটাশিয়াম,
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এগুলো ছাড়াও প্রোটিন
এবং কার্বোহাইড্রেটও আছে। এতে অনেকগুলো পুষ্টি একসঙ্গে থাকার কারণে এটি শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও সজিনার বীজে থাকে প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। পরিপক্ক সজিনার বীজ উদ্ভিদ তেল হিসেবেও পাওয়া যায়, যা রান্নার কাজে বা মেশিনে
ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া সজিনার বীজে থাকা আমিষ ব্যাকটেরিয়াকে জমাট বন্ধ
করে আলাদা করে ফেলে। তাই পানীয় জল বিশুদ্ধ করতে বীজের গুঁড়ো পাউডার ব্যবহার করা
যেতে পারে। সজিনায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যামিনো এসিড থাকায়
এটি ত্বকেরও চুলের জন্য খুব উপকারী।
ডায়াবেটিস রোগীর সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
ডায়াবেটিস রোগীর সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা
প্রয়োজন। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন চিকিৎসায় সজিনা গাছের পাতা, ফুল, বীজ
এবং শিকড় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সজিনা গাছের সবকিছুই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, ব্যাকটেরিয়া এমনকি জয়েন্টে ব্যথা
প্রতিরোধেও সজিনা ডাঁটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সজিনা পাতায় প্রচুর পরিমাণে
উপকারিতা রয়েছে। সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- সজিনা বা মরিঙ্গা পাতা রক্তে থাকা শর্করার পুরো মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কারণ এতে আছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করে।
- সজিনা পাতাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানগুলি রয়েছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- এছাড়াও সজিনা পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে যা শরীরের ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ায়, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়।
- সজিনা পাতাতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এতে থাকা বিভিন্ন প্রোটিন রক্তের শর্করার মাত্রা কমায়। তাই এটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী।
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাবারে ৫০ গ্রাম সজিনা পাতা যোগ করা হলে রক্তে শর্করার বৃদ্ধি ২১% কমে যায়।
সজিনা পাতা খাওয়া সবার জন্য নিয়ম প্রায় একই। সজিনা পাতার গুড়া ১ চা চামচ ১ গ্লাস পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে খাওয়া যায় অথবা চায়ের পাতার মতো এটি ব্যবহার করা যায়। এমনকি শুকনা পাতার গুড়া ফুটানো পানিতে দিয়ে ছেঁকে পান করা
হলে তা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।সজিনা
পাতা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের আহারে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। কার্বোহাইডেট এর পরিমাণ
প্রাকৃতিকভাবে কম থাকে। এটি ডায়াবেটিক রোগীদের সেসব কার্বোহাইড্রেট
জোগানে সাহায্য করতে পারে যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
শুধুমাত্র সজিনা পাতা খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক নয়।
আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্বাবস্থিত প্লান এবং ডায়েট প্ল্যান
একজন বিশেষজ্ঞ এর সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন।
আরোও পড়ুনঃ
ত্বক ও চুলের যত্নে সজিনা পাতার ব্যবহার
ত্বক ও চুলের যত্নে সজিনা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। ত্বক ও
চুলের যত্নে মরিঙ্গা লিফ বা সজিনা পাতা্র উপকারিতা অনেক। এটি ত্বকের দাগ-ছোপ
দূর করে। পাশাপাশি রুক্ষ চুলকে করে তোলে কোমল এবং চুলকে করে লম্বা। শুধু মানবদেহের জন্যই সজিনা পাতা উপকারী নয়। সজিনা পাতায় রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ যা ত্বককে ভিতর থেকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সজিনা পাতা সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত।
এছাড়াও প্রচুর খনিজ পদার্থ রয়েছে আরও রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি,
রাইবোফ্লাভিনফোলেট এবং এসকরবিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,
প্রোটিনসহ ইত্যাদি। এসব উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সজিনা পাতার
তেল বা গুড়া উভয়ই ত্বকের চুলকানি দূর করে। এছাড়াও আন্টি-অক্সিডেন্ট থাকায়
এটি ব্যবহারে ত্বকের বলিরেখা কমে। সেই সঙ্গে ত্বকের কালচে দাগ-ছোপও দূর
হয়।
ব্রণের সঙ্গে লড়াই করে সজিনা পাতায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি
গুণাগুণ। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। সজিনা পাতার
তেলে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ফাঙ্গাল একনি থেকে ত্বককে বাঁচায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা
বাড়ায় সজিনা পাতার গুড়ো দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক। নিয়মিত এই ফেসপ্যাক ব্যবহারে
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনসমূহ।
ত্বকের মতো চুলের জন্যও অনেক উপকারী সজনে পাতা। এটি চুল লম্বা করে স্ক্যাল্পের
বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। সেই সঙ্গে চুলের রুক্ষতা আগা ফাটার সমস্যা থেকেও
বাঁচায়। সজিনা পাতায় থাকা এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য খুশকি এবং
ফ্ল্যাচি স্ক্যাল্প প্রতিরোধ করে। সজিনা পাতায় থাকা হাইড্রেটিং এবং ডিটক্সিফাইং
উপাদান চুল দ্রুত লম্বা করে। এছাড়াও রয়েছে প্রোটিন যা চুলকে ভেতর থেকে মজবুত ও
শক্ত করে।
সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে হজম শক্তি বাড়াতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে সজিনা পাতা। কলেরা, আমাশয়, ডায়রিয়া, এবং জন্ডিসের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই সজিনা পাতা। সজিনা পাতার বড়া,
সালাদ, ভাজি, পাতা বাটা ও সজিনা পাতার পাউডার ব্যবহারে খাদ্য সুস্বাদু ও শক্তিবর্ধক করে তুলতে সাহায্য করে।
চা বা কফি তৈরিতে সজিনা পাতার পাউডার ব্যবহার করা যায়। এক টেবিল চামচ শুকনা
সজিনা পাতার গুড়া থেকে ১-২ বছর বয়সী শিশুদের অত্যাবশ্যকীয় ১৪% আমিষ, ৪০% ক্যালসিয়াম এবং ২৩% লৌহ ও ভিটামিন এ দেহে সরবরাহ হয়ে থাকে। দৈনিক ৬ চা চামচ সজিনা
পাতার গুড়া খেলে একজন গর্ভবতী ও স্তন্যধাত্রী মায়ের ক্যালসিয়াম ও
আয়রন চাহিদার সবটুকু সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
সাধারণত সজিনা পাতা আমাদের দেশে ভেজে খাওয়ারই রেওয়াজ আছে। কেউ কেউ তরকারি করে
খায়, কেউ সিদ্ধ খায় আবার কেউ কাঁচা পাতা বেটে রস করেও খায়। গবেষণায় দেখা
গেছে সজিনা পাতায় কমলালেবুর যে ৭গুণ বেশি ভিটামিন সি, গাজরের চেয়ে ১০গুণ বেশি
ভিটামিন এ, দুধের যে ১০গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার যে ১৫গুণ বেশি পটাশিয়াম এমনকি
পালংয়ের চেয়ে ২৫গুণ বেশি আয়রন আছে।
আরোও পড়ুনঃ
সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা
সজিনার ডাটা সবজি হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়। তবে সজিনার পাতা খাওয়ার চলও বেশ পুরনো।
আজকাল আবার সজিনা পাতার গুড়া খুব চলছে। ইংরেজিতে মরিঙ্গা পাউডার নামে অনলাইনে
দারুণ পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে নানারকম পুষ্টিগুণ আর বলবর্ধন হিসেবে সজিনা
পাতার গুড়া খাওয়ার চল বেড়েছে। শাক হিসেবেও সজিনা পাতা খাওয়ার প্রচলন আছে। যেকোনো স্যুপের সাথে শুকনা সজিনা পাতার পাউডার মিশালে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।
সজিনা গাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। প্রতি গ্রাম সজিনা পাতায় একটি
কমলার চেয়ে ৭গুণ বেশি ভিটামিন সি ও ২গুণ বেশি প্রোটিন থাকে, গাজরের ৪গুণ বেশি
ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে ৩গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান আছে।ফলে এটি অন্ধত্ব,
রক্তস্বল্পতাসহ বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি জনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার
হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন দুধ খেতে না পারলে ১ চামচ করে সজিনা পাতার গুড়া
খেতে পারেন।
সজিনা পাতায় রয়েছে এমন উপাদান যা একজন মানুষের দেহে নিয়মিত পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে। সজিনা পাতায় রয়েছে পরিমাণে অনেক বেশি প্রোটিন ও আয়রন। সজিনার পাতা শুকিয়ে গুড়া করে খেলে এর পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে, নষ্ট হয় না।শরীরের ওজন কমাতে ব্যায়ামের
পাশাপাশি নিয়মিত সজিনা পাতার গুড়া খেলে কার্যকরী ফল পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও সজিনা পাতা খেলে অকাল
বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর হয়।
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সজিনা পাতা সহায়তা করে কোনো রকম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই। ১ টেবিল চামচ সজিনা পাতার গুড়ায় ১৪% প্রোটিন, ৪০% ক্যালসিয়াম, ২৩% আয়রন রয়েছে এবং দুগ্ধদানকারী মায়ের
প্রতিদিনের ঘাটতি পূরণ করে।সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবেও কাজ করে সজিনা
পাতা। সজিনা পাতার গুড়ায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এটি যকৃত
কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম জানা দরকারী। কাঁচা সজিনা পাতা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উপকারী খাদ্য। আসন কাঁচা সজিনা পাতার
উপকারিতা ও খাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।ডায়াবেটিস একটি
প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত
করছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাদ্যাভাস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে
কাঁচা সজিনা পাতা পুষ্টিতে ভরপুর একটি খাদ্য উপাদান। এতে রয়েছে প্রয়োজনীয়
ভিটামিন খনিজ ও আন্টি-অক্সিডেন্ট। কাঁচা সজিনা পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রক্তে
শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
কাঁচা সজিনা পাতা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে প্রধান
একটি সাধারণ সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কাঁচা সজিনা পাতা সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। কাঁচা সজিনা পাতা টমেটো, শসা,
পেঁয়াজ এবং অন্যান্য প্রিয় সবজি মিশিয়ে সালাদ তৈরি করা যায়। লেবুর রস এবং
অলিভ অয়েল দিয়ে সালাদের স্বাদ বৃদ্ধি করা যায়। কাঁচা সজিনা পাতার রস
অত্যন্ত উপকারী। সজিনা পাতা ব্লেন্ড করে রস বের করে পান করা যায়। খালি পেটে
সকালে এর রস পান করলে উপকারিতা বেশি মেলে।কাঁচা সজিনা পাতা চাটনি হিসেবে খাওয়া
যায়।
সজিনা পাতা কাঁচামরিচ, রসুন, ধনেপাতা এবং লবণ দিয়ে ব্লেন্ড করে চাটনি তৈরি করা
যায়। এই চাটনি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও স্বাদযুক্ত একটি
খাবার। কাঁচা সজিনা পাতা পেস্ট হিসেবে খাওয়া যায়। সজিনা পাতা পিষে পেস্ট তৈরি
করে ভাত বা রুটির সঙ্গে খাওয়া যায়। কাঁচা সজিনা পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ কমে যেতে পারে তাই কাঁচা
সজিনা পাতা উপকারী।
আরোও পড়ুনঃ
সজিনা পাতার বহুমুখী ব্যবহার
সজিনা পাতার বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে আমরা অনেকে অবগত নই। চলুন সে সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। সজিনার পাতা, শিকড় এবং অপরিণত শুটি সবজি হিসেবে
খাওয়া হয়। এছাড়া এই গাছের বাকল, শুটি, পাতা, বাদাম, বীজ, কন্দ, শিকড় এবং
ফুলসহ গোটা অংশ খাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
প্রকাশিত জন হপকিন্স ম্যাগাজিনে সজিনকে শুষ্ক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অপুষ্টি
প্রতিরোধে শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষণ প্রমাণ এবং একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে সজিনায় প্রচুর পরিমাণে
পুষ্টি ঔষধি গুণ আছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়। সবজির চেয়ে এর পাতার গুণাগুণ আরো
বেশি। সজিনা পাতায় ৯ ধরনের অত্যাবশকীয় অ্যামিনো এসিড সহ ৩৮ শতাংশ আমিষ
বিদ্যমান। এছাড়াও এতে আছে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন এ, বি
এবং সি। কিন্তু সজিনা কার্যকারিতা কেবল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলেই শেষ করলে এর
যথাযথ মূল্যায়ন হবে না।
সজিনার পরিপক্ক বীজ উদ্ভিজ তেল হিসেবেও পাওয়া যায়। যা রান্নার কাজে বা মেশিনে
ব্যবহার করা যেতে পারে। কেবল খাদ্য উপাদানই না সজিনায় ঔষধি গুণাগুণও
বিদ্যমান। ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, সজিনা গাছ ৩০০ রকমের রোগ নিরাময়ের মহৌষুধ। বর্তমান বিজ্ঞানও এটি সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দ্বারা
পরিচালিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চিকিৎসা গ্রন্থাগার ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিন এ
প্রকাশিত এক প্রবন্ধে সজিনার ঔষধি গুণাগুণের কথা উল্লেখ রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় সজিনা ডাটা খাওয়া যাবে কিনা
গর্ভাবস্থায় সজিনা ডাটা খাওয়া যাবে কিনা বা এর উপকারিতা কি কি হতে পারে তা
সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। সজিনার ডাটা অনেকের খুব প্রিয় একটি সবজি। সজিনার
ডাটা দিয়ে হরেক রকমের তরকারী রান্না করা যায়। সব থেকে পরিচিত রেসিপি হলো
সরিষা ও আলু দিয়ে সজিনা ডাটা ঝোল আর ডাল। চলুন তাহলে জেনে নিই গর্ভাবস্থায়
সজিনার ডাটা খাওয়া যাবে কিনা সম্পর্কে।
- সজিনা পাতায় ফোলেট শিশুর নিউরাল টিউব গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হল ফোলেট এবং এটি গর্ভের ভ্রুনের ব্রেইন এবং মেরুদন্ড গঠনে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। আর এই ফোলেটের অভাবে আপনার গর্ভের ভ্রুনের স্পাইনা বিফিডার মত নিউরাল টিউব এর ত্রুটি দেখা দিতে পারে।তাই আপনি যদি সজিনা ডাটার পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় সজিনা পাতা খেতে পারেন। তাহলে গর্ভাবস্থায় শিশুর জন্মগত স্বাস্থ্য ত্রুটি গুলো অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হবে।
- গর্ভকালীন সময়ে সজিনার ডাটা খেলে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রাতঃকালীন অসুস্থতার লক্ষণগুলি কমতে শুরু করে তাই যদি গর্ভাবস্থায় নিয়ম করে সজিনার ডাটা খান তাহলে আপনার মাথা ঘোরা বমি বমি ভাব এ সমস্ত লক্ষণগুলো অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
- গর্ভাবস্থায় আপনি যদি সজিনার ডাটা খান তাহলে এটি আপনার শরীরের রক্ত শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে। গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিসের মতো সকল জটিল সমস্যা গুলো রোধ করতে সক্ষম এই সজিনা ডাটা।
- সজিনা ডাটায় রয়েছে উচ্চ মাত্রার আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান থাকে যা শক্তিশালী হাড় গঠনে এবং হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় প্রায় প্রত্যেকটি মহিলার একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে অ্যানিমিয়া। সাধারণত গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি দেখা দেওয়ার ফলে এই অ্যানিমিয়া রোগের সৃষ্টি হয়। তাই গর্ভাবস্থায় আপনি যদি নিয়ম করে সজিনা ডাটা খান তাহলে তা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে এবং অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
- সজিনা ডাটায় বিদ্যমান অ্যান্টি-মাইক্রোডিয়াল যা গর্ভকালীন সময়ে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে।
- গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ সমস্যা। আপনারা যদি সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে সজিনা ডাটা খেতে পারেন। সজিনার ডাটায় উচ্চমাত্রার তন্তু বা ডায়েটরি ফাইবার রয়েছে যা আপনার মলকে নরম করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
- সজনে ডাটাই কিছু ঔষধি গুন থাকার কারণে গর্ভকালীন সময় এটি আপনার পেটের ব্যথা বা পেটে যত সমস্যা রয়েছে সেগুলো প্রশমিত করতে বেশ সাহায্য করে।
- সজিনা ডাটা মেয়েদের জরায়ুর সংকোচন গুলোর উন্নতি ঘটায় যার ফলে এটি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সন্তান প্রসবের সহায়তা করে এবং প্রসব পরবর্তী সকল জটিলতা গুলোকে কমিয়ে দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সজিনা ডাটার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এড়াতে নিয়ম করে পরিমিত
পরিমাণে সজিনা ডাটা খাওয়া উচিত। তবে গর্ভাবস্থায় সজিনার পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে
সতর্ক থাকতে হবে সজিনার পাতা সংলগ্ন ডালে যে বিষাক্ত উপাদান রয়েছে সেটি এ সময়
শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেক তাই গর্ভকালীন এটি খাওয়া থেকে বিরত
থাকা ভালো। তবে গর্ভাবস্থায় সজিনা ডাটা খেলে কোন ধরনের ক্ষতি হওয়ার
সম্ভাবনা নেই।
আরোও পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় সজিনা পাতা খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় সজিনা পাতা খেলে কি হয় জানা অন্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায়
আপনি যদি সজিনা পাতার গুড়া খান তবে প্রয়োজনের সকল পুষ্টি পেয়ে যাবেন। এজন্য
গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন ৬ চামচ সজিনা পাতার গুড়া খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায়
সুজিনা পাতা খেলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে নিচের দেওয়া লেখা
গুলো খুব যত্ন সহকারে পড়ুন, তাহলে আপনি খুব সহজেই জেনে যেতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় সজিনা পাতার উপকারিতা জানা অতীব জরুরি। কেননা গর্ভাবস্থায় শিশু
সঠিক বিকাশ লাভের জন্য একজন মায়ের কোন কোন খাবারগুলো খেলে পুষ্টি পাওয়া যায়
এবং কোন খাবারগুলো খেলে ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে অবগত হওয়া
দরকার।গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজের অভাব থাকে আর এই
অভাব পূরণ করার জন্য এই একমাত্র উপায় হল সজিনা পাতা। এজন্য একজন গর্ভবতী
মায়ের সজিনা পাতা নিয়ম করে খাওয়া উচিত।
সজিনার পাতায় পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ভিটামিন এ,
ভিটামিন সি এর সকল পুষ্টি একসঙ্গে রয়েছে। সজিনা পাতা এমন একটি সবজি যেটি
খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা দূর হয়ে যায়। একজন গর্ভবতী মহিলার যেসব পুষ্টির
ঘাটতি থাকে তা একমাত্র সজিনা পাতা খেয়েই সব ধরনের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা
সম্ভব।
সজিনা পাতা রোগ প্রতিরোধ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যাদের
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হয় তারা সজিনা পাতা খেতে পারেন। কারণ এটি
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও যাদের শরীরে বিভিন্ন অংশে
ব্যথা হয় তারা সজিনার পাতা নিয়মিত খেলে এ ব্যথা দূর করতে পারবেন। ক্যান্সার
প্রতিরোধ করার জন্য সজনা পাতা অত্যন্ত কার্যকরী।
আরোও পড়ুনঃ
সজিনা পাতার রসের গুনাগুন বা উপকারিতা
সজিনার পাতা প্রায়শই একটি সুপার ফুড হিসেবে সমাদৃত, প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর
এবং অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। আপনার ডায়েটে সজিনা পাতার রস
অন্তর্ভুক্ত করা আপনার সামগ্রিক সুস্থতার উল্লেখযোগ্য ভাবে অবদান রাখতে পারে।
সজিনার পাতা রসের উপকারিতা সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
- পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে সজিনা পাতার রসের ভূমিকা অনেক। এতে ভিটামিন এ, সি এবং ই এর মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির সাথে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থে ভরপুর। এই পুষ্টি উপাদান গুলো শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়া-কলাপ বজায় রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
- নিয়মিত সজিনা পাতার রস পান করলে স্বাস্থ্যকর পরিপাকতন্ত্রকে উন্নীত করতে পারে এবং গ্যাসট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলো দূর করতে পারে।
- সজিনা পাতার রস কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা হার্টকে অক্সিডেটিভ ট্রেস থেকে রক্ষা করে।
- সজিনা পাতার রসে এন্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের উপস্থিতি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে যা শরীরকে সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে আরো স্থিতিস্থাপক করে তোলে।
- সজনে পাতার রসে ক্যালরি কম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। এটি ওজন কমানোর ডায়েটে একটি আদর্শ সংযোজন। এটি তৃপ্তি বাড়ায়, লালসা কমায় এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- সজিনা পাতার রস প্রাকৃতিক পাচনক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে যা অনুভব গতি নির্বাহে সাহায্য করে।
এই সমস্ত উপকারিতা একসাথে মিলে সজিনা পাতার রস সেবন করা যেতে পারে। সজিনা পাতার
রসের উপকারিতা একটি পুষ্টি শক্তিশালী যা বিস্তৃত স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান
করে। তবে যদি আপনার ডায়েটের সজিনা পাতা অন্তর্ভুক্ত করতে আপনি যদি
দ্বিধাবোধ করে থাকেন তবে অবশ্যই আপনার একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে।
সজিনা পাতার ক্ষতির দিক বা অপকারিতা
সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে এতক্ষণ উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি এখন
আমরা অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিব। সজনা পাতার উপকারিতা অনেক এর তুলনায় এর
অপকারিতা খুবই নগণ্য তারপরও আমাদের এটি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সজিনা পাতায়
অনেক বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ ঔষধি গুণ থাকলেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সজিনা পাতার গুড়াতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
থাকে। তাই খুব বেশি পরিমাণ সজিনা পাতার গুঁড়ো বা মরিঙ্গা পাউডার গ্রহণ করলে খিদে
কম হতে পারে এবং পেটে গ্যাস বা ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ন্যাশনাল
লাইব্রেরী অব মেডিসিনে প্রকাশিত প্রবন্ধে এর কয়েকটি ঝুঁকির দিক উল্লেখ করা
হয়েছে।
- গর্ভবতী নারীদের জন্য সজিনার পাতা প্রতিদিনের আয়রন ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি প্রজনন রোধও হতে পারে।
- সজিনা পাতা থাইরয়েড এর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও থাইরয়েডের চিকিৎসার সময় অন্য কোন ওষুধের সাথে মেশালে সমস্যা দেখা দিতে পারে
- সজিনা পাতা কিছু ক্ষেত্রে রক্তের শর্করার মাত্রা খুবই কমিয়ে দিতে পারে। তাই সেদিকে সতর্ক থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।
- রক্তচাপ কমানোর ওষুধের সাথে সজিনা পাতা খেলে তা রক্তচাপ অতিরিক্ত পরিমাণে কমিয়ে দিতে পারে। তাই সেদিকে খেয়াল রেখে সজিনা পাতা খাওয়া উচিত।
- যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তাদের সজিনা না খাওয়াই উত্তম কারণ কিডনি রোগীদের পটাশিয়াম ফসফরাস এবং প্রোটিন রেস্ট্রিক্টেড করা হয়। অন্যদিকে সজিনা পাতায় অনেক পটাশিয়াম ফসফরাস এবং প্রোটিন থাকে। তবে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কিডনি সুরক্ষায় সজিনা পাতা বেশ উপকারী।
- সজিনা পাতা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে বমি বমি ভাব, পেটের সমস্যা এবং ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- সজিনা পাতার সাথে যে ডাল থাকে সেগুলো আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। এই ডালগুলোতে ক্ষতিকর উপাদান থাকে যা আমাদের দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমের ক্ষতি করে দেয়।
সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে সজিনা পাতার অনেক উপকারিতা থাকলেও এটি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে সৃষ্টি হতে পারে
বিভিন্ন সমস্যা। সজিনা এর মূল অনেক সময় বিষাক্ত হতে পারে যা স্নায়ুকে অবশ করে
দিতে পারে। তাই খাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বর্জন করাই শ্রেয়।
আরোও পড়ুনঃ
শেষ কথাঃ হাজার গুণের পাতা সজিনা পাতা
আজকের আর্টিকেলটিতে সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে
পুরোপুরি বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে
পড়ে আপনারা উপকৃত হতে পেরেছেন। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার কোনো মতামত থাকে তাহলে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন এবং
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন।
মানবদেহে যেসব উপাদানের নিয়মিত প্রয়োজন তার সবই সজিনা পাতায় আছে। সজিনা পাতা
সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এখানে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমরা ইতিমধ্যে
উপরে আলোচনা করেছি। সজিনা পাতায় ৯০টিরও বেশি, ৪৬ রকমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ৩৬টির
মতো অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, সজিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোব্রিয়াল,
অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আপনার কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও
শরীরের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে আপনার দেহকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। নিয়মিত
সজিনা পাতার পাউডার খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। করোনা
প্রতিরোধেও সজিনা পাতা ও ফল উভয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
রকমসকম ডট কম ওয়েবসাইট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url